Thursday, August 27, 2009

ঝাঁ ঝাঁ ঝিঁ ঝিঁ

টোকন ঠাকুর

প্রকাশক
মজিবর রহমান খোকা
বিদ্যাপ্রকাশ
৩৮/৪ বাংলাবাজার, ঢাকা।
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০৩
স্বত্ত্ব: বর্ষা বিভাবরী
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
আলোকচিত্র: নাসির আলী মামুন
বর্ণবিন্যাস:
ইনামুল হক
দাম: পঞ্চাশ (৫০) টাকা।

উৎসর্গ
হযরত আহমদ ছফা
ছফার কথাগুলো ঝুরি হয়ে নেমে গেছে মাটিতে মাটিতে
ছফা দাঁড়িয়ে আছেন মাঠের শিয়রে
প্রাচীন বটের মতো

আত্মপক্ষ সম্প্রচার

আগুনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিলেই
        আমি মরে যাব। আমি
অনেক প্রক্রিয়া শেষে, আগুনকে হাতের আঙুলে
            ধরে ফেলি
তারপর ঠোঁটে লাগিয়ে দিই
তারপর আমার আত্মা পুড়ে ছাই হয়ে যায়
তারপর আমি আত্মভস্ম-ছাইয়ের মধ্যেই
            বৃষ্টির প্রার্থনা করি
তারপর বৃষ্টি ঝরে পড়ে

তারপর অঝোর একটি কবিতা-লাভ হয়
ফলে, কবিতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক জমে ওঠে
            এবং আমার জন্ম হয়

আশ্বিনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিলেও
                আমি বাঁচব না
আশ্বিন, যে অনেক অভাবে থেকেও, ছেঁড়ামেঘ
আর কাঁশবনের প্রশ্রয়ে আমাকে জন্ম দিয়েছে...
যে কারণে প্রতিবছর নদীপাড়েই আমার জন্মদিন
                পালিত হয়
যে কারণে বিসর্জনের সন্ধ্যায় আমি নদীকেই
মা বলে ডাকতে ডাকতে কেঁদে ফেলি

এছাড়া যত বাষ্পের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেলেও
            আমি বাঁচব না
                আমি মরে যাব
যেহেতু আমার কথারা এখনও
        বুদবুদ হয়ে জন্ম নিচ্ছে
            বুদবুদ হয়ে ফেটে যাচ্ছে

জাদুঘর-দর্শন

জাদুঘর সম্পর্কে আজ ধারণাই পাল্টে দেব
আজ আমি জাদুঘর সম্পর্কে নতুন তথ্য জানাব

প্রস্তুতিস্বরূপ
আমি অসংখ্যবার জাদুঘরে গিয়েছি
        আর অসংখ্যবার জাদুঘর দেখেছি।
বলা দরকার, প্রথমবার জাদুঘর-দর্শনের পর
আমার জাদুঘর-ধারণা ভেঙে গিয়েছিল;
সেই ভাঙা, পরে আরও টুকরো টুকরো হয়ে
            চূর্ণ হয়ে যায়।

কণা কণা জাদুঘর শুক্রবারে ভিড় বেশি জাদুঘরে
আমার চোখের মধ্যে জাদুঘর ঢুকে পড়ে

ফলে হরিণের হাড়, ফড়িঙের মমি, বাঘের ডামি
প্রত্নতত্ত্ব, ঢাল-তলোয়ার কী বাহার আমাদের হারানো জীবন
খাটপালঙ্ক, মূর্তি, মুদ্রা, ইতিহাস, জয়পরাজয় হাহাকার; এ বাদে
ফুলের বদলে ফুল, ফলের বদলে ফল, খুলির বদলে খুলি
আর মৃত বেলেহাঁসগুলি... এই তো?

এরকম আরও কত কী টুকরো টুকরো কণা কণা জাদুঘর
আমারই চোখের মধ্যে ঢুকে গিয়ে চোখ দুটো জাদুঘর হয়ে গেছে-

বিশ্বাস না-হলে, হে দর্শনার্থী
        তাকাও এবং দ্যাখো

দাতাসংস্থার লাবণ্যে আমাদের কবিজীবন

শব্দ নিয়ে কাজ করছি। এ কাজ করতে গিয়ে
সেভাবে ধরতে পারিনি যে, ইতিমধ্যেই আমরা কত
        নৈঃশব্দের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছি

একসময় থেমে যায় সকলপ্রকার গুঞ্জরণ
তাই বলে কি সবখানেই থামে?
সিঁড়িতে ওঠবার পথে, দেখা যাচ্ছে
        কেউ কেউ নামে

অথচ নামতে না-পারা, উঠতে না-পারা
কিন্তু ওঠার কল্পভারা
        এই যে মধ্যবিত্ত, এই যে ফুচকিমারা
                কসমোপলিটন:
এর মধ্যেই সঙ্গম হচ্ছে, শিশু জন্মাচ্ছে, ধন্য হচ্ছে
দাতাসংস্থার লাবণ্যে আমাদের কবিজীবন

বাক্যবিস্তার

বাক্য বহো বাক্য বহো বাক্য বহো ধীরে
বাক্য ব্যাকুল জলাঙ্গিনী, আছড়ে পড়ে তীরে।
ফলে, একদিন শুনতেই হল-
        ‘বাক্য বলতে কি বোঝ?’
আমি সাফ জানিয়েছি, বাক্য বলতে খুঁজে পাওয়া
            এবং নিখোঁজও

বাক্য চাহ বাক্য চাহ বাক্য চাহ পানে
বাক্য মাতাল মধুবন্তী, বনজোছনার গানে;
এতে একদিন বুঝতে পারলাম-
কোনও কোনও বাক্য বুদবুদ হয়ে জন্মায়
        ফেটে যায় এবং মরে যায়
এবং বুদবুদে নিহিত নিগূঢ় বাক্যরাগ
            বাতাসে মিলিয়ে যায়

বাক্য রহো বাক্য রহো বাক্য রহো ব্রতী
বাক্য লীলার বজ্রাঙ্গনা, বাক্য সরলমতি,
তবু একদিন দেখতেই হল-
বাক্য ক্রমশ জটিল হচ্ছে, জড়িয়ে যাচ্ছে আর
হাসি হাসি মুখগুলি নিভে আসছে...
        পান করছে এমএ পাশ আঁধার

বালিসংস্কৃতির দিনে

বালিসংস্কৃতির দিনে আমি তরমুজ-ভাবনা করি, আহ্ ত-র-মু-জ!
যা শুধু ফলই নয়, ফলকে ছাড়িয়ে
অন্য কিছু, অন্য ফাইল; ডাউনলোড মোমোরি
আর শাই শাই অন্তর্জাল, ইমেল-ফিমেল-হাওয়া, যখন
                দুহাত বাড়িয়ে
থেকে আকাশের দিকে অসম্ভব রচয়িতা
বলে সম্ভাষণ ছড়িয়ে পড়ে আমার, যে-আমি আমাদের...
যে-আমি যামিনীর তৃতীয় প্রহরে খসড়া করেছি
                সন্ধ্যার কবিতা,
যে-আমি সর্বশেষ সভাপতি, নির্জন বাঁধের

ওদিকে হেঁটে হেঁটে তারপর একদিন বিকেল, দুপুর, সকাল হয়ে
উল্টোপথে রাত্রিতে পৌঁছেই, আবার সন্ধ্যার দিকে
ছই তুলে পবণ উড়িয়ে দেখি: মুগ্ধপাঠ বিস্ময়ের
মধ্যে জন্ম নেয় তরমুজ, রমণীয়;
        বালুচরও তুলে ধরে হেন সত্যটিকে

কিরে কেটে বলছি, এসবের মধ্যে যে নদী,
            সেই নদীধারণাও লিখিত
                বৈদগ্ধ পয়ারে-
বালিসংস্কৃতির দিনে এত জল, রসবোধ আমাকে পুড়িয়ে মারে!

বর্ষাপ্লুত

বর্ষার পরেও কিন্তু বর্ষার জল জমে থাকবে
            এখানে সেখানে।
আর কিছুদিন পর, সেই জলও মিলিয়ে যাবে।
মিলিয়ে যাবে ছাঁটলাগা শিহরণ, জানলার এপাশ
মিলিয়ে যাবে আমার দেখা একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা

কিন্তু বর্ষার লেখা, আপাদমস্তক ভেজা কবিতাটি
                থেকে যাবে।
হেমন্তে, যখন বৃষ্টিপ্রায় অসম্ভব
তখন এটি পাঠ করলেই দেখবে-
মিলিয়ে যাওয়া অনেক অঝোর বিকেল
            অমর ইচ্ছা
সব আবার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে...

ভাবতে পারো, এই বর্ষায় কত কিছু হয়ে যাচ্ছে?

খাদ্যসামগ্রী

আমাদের খাদ্যতালিকায় আমি তোমার নাম লিখে দিতে চাই- কিন্তু কেন যেন দেয়াই হয় না। হয়ত একারণে যে, পাছে তোমাকে আমি খেয়ে ফেলি। কিন্তু আমি না-খেলেও, অবশ্যই অন্য কেউ তোমাকে খাবে, আমি তার খাবার-আস্বাদ্য ঢেকুর শুনতে পাব।

আমাদের খাদ্যতালিকায় আছে উল্লেখযোগ্য বিশিষ্টতা। চাল-ডাল, নুন, ঝলসানো আগুন, সবুজ সবুজ শীতকালীন কুয়াশা, পরম প্রেমে পাওয়া ভালোবাসা আর আমাদের স্বপ্ন, সময়, সম্ভাবনা... কত যে কত কী?

আমরা কখনও অনাহারী থাকব না, বাংলাদেশে। অবশ্য কেউ কেউ বা অনেকে সবাই, বেঁচে থাকতে গিয়ে চিরকালই পোড় খেয়ে চলেছে

জানো, পোড় খেতে কী মজা?

প্রাপ্তিসংবাদ

শিল্পী নঈম হারুন শ্রদ্ধাভাজনেষু
বিড়াল যদি উড়ে যায়, আমরা কি খেয়ে বাঁচপো?
খিদেও যদি কেটে পড়ে, আমরা আগুন, নাচপো।

সাধারণত বিড়াল খাওয়া নিষেধ, কিন্তু খাচ্ছি।
বিড়ালের তো উড়ালের কথা না, কিন্তু সে উড়তেছে
                দেখতে পাচ্ছি।
এতদসঙ্গে দেখা যাচ্ছে- স্বাধীনতা নিতে নিতে স্বেচ্ছাচারী
এক সভাপতি (মধ্যাহ্ন সংরক্ষণ কমিটির) সেই কি এই
        পার্কের দুপুরে বসে
বিড়াল ওড়াচ্ছে, পাতা পোড়াচ্ছে? ভাবনার দোষে
সিনেমায় দেখা ঘোড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেও দৌড়াচ্ছে?

এদিকে, বাঙলা কবিতা কিছু পাক বা না-পাক
            কবিরা কিন্তু দশক পাচ্ছে!

স্মৃতিবৎ

মনে থাকে, মনে থেকে যায়
সুষমাদের বাড়ির পেছনে বকুলগাছ ছিল
কিন্তু সুষমা গোলাপ পছন্দ করত

আমি পছন্দ করি বকুলতলা

বহুদিন পর, সুষমার মুখ আজ আবছা-ঝাপসা মনে হয়।
কেবল কয়েকটি গুটিবসন্তের দাগ ছাড়া
        আর কিছুই কি মনে পড়বে না?

দুপুরে, বনের মধ্যে

শুধু আবছায় প্রকাশিত
শুধু ধারণা গভীরতর!
দুপুরে, বনের মধ্যে আজও
পাতা, এই যে এভাবে ঝরো
এর কোনও মানে আছে?

শুধু উড়ে যাওয়া প্রতিদিন
শুধু কলসিতে ভরা ছল,
আমিও জানিয়ে রাখি, প্রেমে
রেখেছিলাম ভূমিকা প্রবল
তাতেই তুমুল কাঁপানো প্রত্যাখ্যান?

শুধু প্রত্যাখ্যান থাকে বলে
এদেশে এখনও প্রেমিক মেলে;
শুধু আবছায় দেখে, লিখে
অহেতু, অঝোর কবিতা পেলে-
তার কোনও মানে আছে?

আর কোনও মানে আছে-
পাতার এই যে এভাবে ঝরা?
দুপুরে, বনের মধ্যে আজও
মৃগয়ার অর্থ ক্লিয়ার করার
আর কোনও মানে আছে?

হাটের কবিতা

গঞ্জে, হাটের নিকটে এসে শুনে ফেলি-
বেচাকেনার নামে এক থই থই কলরব!

বয়েসি সন্ধ্যা নামছে, আর আমি আশ্চর্য হই
একএকটি মানুষের সঙ্গে হাট চলে যাচ্ছে
        দহকোলা, দুধসর, ঝিনুকদহের দিকে;
এশার আগেই হাট বলতে কিছু নেই, সব
পকেট উজাড় করে থলের ভেতরে চলে গেছে
        মৎস্য হয়ে, মাংশ হয়ে- এমনকি
            নিদ্রাকুসুম তৈল এবং রাজা কনডম হয়ে...

আগামী শুক্রবার এলে, আবার কি হাট দেখা যাবে?

গঞ্জের হাট সম্পর্কে আরও যা যা দেখেছি, লিখতে গেলে
    বিগসাইজের একটা উপন্যাস হতে পারে;
আপাপত, লাউ বিক্রি না-হওয়া বুড়ো স্বদেশবন্ধুর সঙ্গে
হাটের কবিতা কিভাবে লেখা যায়, তা-নিয়ে
            আলাপ জমাই, চলো!

হাওয়াই আলাপ

‘হাওয়াই হচ্ছে রিয়েলিটি, বুঝলেন?
এই যে বাসের মধ্যে, এত হাওয়া ঢুকে পড়ছে,
স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও বারবার হাওয়ার কথা বলেছেন-
        পাগলা হাওয়া, মন্দ মধুর...’

পাশের লোক বললেন; আলগোছে বললেন,
বললেন- ‘আচ্ছা, হাওয়া হতে গেলে কি কি লাগবে?
    হাওয়াদের মধ্যে বিখ্যাত কারও নাম...?’

‘আরে প্রশ্ন রাখেন। শোনেন, এটা এখন ওপেনসিক্রেট যে-

রাজনীতি শেয়ারবাজার বিশষ্ক তরুণীরা ব্রা থেকে শুরু করে
রাষ্ট্রীয় গোপন সিদ্ধান্তের মধ্যেও হাওয়া ঢুকে পড়ছে,
যে কোনও মুহূর্তেই বোশেখ নামিয়ে দেবে-
একবার ভাবুন তো, কী হবে?’

‘আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আপনি কট্টর হাওয়াপন্থী?
তা হাওয়াদের সঙ্গে আপনার আঁতাত কবে থেকে?’

‘না-না, কি যে বলেন?’

‘তবে হ্যাঁ, মশারির ভেতর হাওয়া ঢুকে পড়েছিল-
এই কবিতাটি আমি পড়েছি, যদিও মীমাংসা পাইনি,
আপনি জানেন, এর মর্মার্থ কি?

‘শোনেন, প্রশ্ন বাড়ালে প্রশ্নই বাড়ে, তার চেয়ে বোঝেন-
হাওয়াদের সর্বশেষ অবস্থা... এখন ওরা
বঙ্গভবন, গণভবন, অধিবেশন চলাকালীন সংসদভবন
এমনকি চিফ অফ স্টাফ কিংবা রাষ্ট্রপতির অনুমতি ছাড়াই নবম ডিভিশনের
ট্যাঙ্কের মধ্যে ঢুকে পড়ছে; জানেন
হাওয়া হতে গিয়ে অনেকেই আর ফিরে আসেনি!
হাওয়াদের ইতিহাসও বড় বেহিসেবি, মর্মান্তিক!
সত্যি করে বললে, দিনতারিখের উল্লেখও নেই
        কখন কিভাবে কোত্থেকে তাদের
            যাত্রা শুরু হয়েছিল?

সিটি সার্ভিসের বিআরটিসি থামল। একজন নেমে গেলেন
                হাওয়ার মধ্যে।
অন্যরাও নেমে যাবেন, হাওয়ার মধ্যে।

আবার কি দেখা হবে, হাওয়ার মধ্যে?
আবার কি কথা হবে, হাওয়ার মধ্যে?

Tuesday, August 25, 2009

পুলিশ সমীপে

পুলিশ, তুমি ছাত্রীহলের দিকে বন্দুক-তাকিয়ো না
            ওরা ভয় পাবে।
যা বলার ছাত্রদেরই বলো। প্রয়োজনে চালাও গুলি
যদি চাও নিয়ে যাও সবচেয়ে মেধাবির খুলি!
কিন্তু, ছাত্রীহলের দিকে অ্যাম্বুশ কোরো না! প্লিজ
        ওরা ভয় পাবে-

ভয় পেলে, যে কোনও ছাত্রকেই পরে পুলিশ মনে করবে;
            ফলে, কি দাঁড়াবে?

ভোট দিতে পারার ক্ষমতায় বসে লেখা

শহরে সে এক দৃশ্য আছে, গ্রামবাসিরা
            কিছুই জানো না?
ছাদের ওপর পাহারা-পুলিশ
    বায়ু পাহারা করে?
প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে কভু আকাশ থেকে
দুষ্কৃতিকারী নক্ষত্র যেন ঝাঁপিয়ে না পড়ে?

এটাই আমার মনে হয়েছে, মেট্রো-হাওয়ায়
        মনে হওয়াটা ব্যক্তিগত।
উপমন্ত্রী কূপমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ক্ষতিমন্ত্রী
            মন্ত্রী কজন?
                মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কতো?
গ্রামবাসিরা তাও জানো না?

এনজিওদের সুশীল মানো? কবিতা জানো?
কতো তোমাদের জানাজানির
        শতকরা হার?
            রকম বাহার!

না-এখনো ভাবছ শুধু
        শীতমন্ত্রী
            গ্রীষ্মমন্ত্রী
                বর্ষামন্ত্রীর সমন্বয়ে
                    গঠিত হবে বিকল্প সরকার?

Sunday, August 23, 2009

সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ

শুভসকাল
অনেকে অনেক কিছু হতে চায়
ভেবেছি, আমি হবো কাশারশালার কয়লা

আমি হাপরের হাওয়া পেয়ে, খেয়ে
ভালোটালো বাসবো বিভস্মজীবিকা...

প্লিজ, এর বেশি কিছু বলতে পারব না
    বাঙলা কবিতার পাঠকপাঠিকা!

শুভদুপুর
অনেকে অনেক কিছু দিতে চায়
দেখেছি, আমি দিতে পারি বাক্য, বিশেষণা

আমি বলতে পারি, এই নদীর মধ্যে
কতটুকু পাহাড়ি ঢল, কতটুকু
        বৃষ্টির জলকণা?

শুভসন্ধা
অনেকে অনেক কিছু পেতে চায়
দেখি কী, পশ্চিম আকাশে লাল লাল
দীর্ঘশ্বাসের ফালি
আমার জন্য গিফট পাঠাচ্ছে
        বিমুগ্ধ ভোজালি?

শুভরাত্রি
অনেকে অনেক কিছু নিতে চায়
কিন্তু আমি শিহরণ ও স্মরণযোগ্য
বরফমাখানো রাতে-
ঘুমিয়ে পড়ার আগে, চাই আমারই মতন
        খসে পড়া নক্ষত্র কুড়াতে।

ধনেশ পাখির ঠোঁট

মধ্যে মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে স্থল ও আকাশ।
আমার মাথা আরও মনোযোগী হচ্ছে, ফলে
    বুঝতে পারছি আদিগন্ত ঝিম কাকে বলে?

এরই মধ্যে পিপাসারা হাওয়া পেয়ে
        দীর্ঘ তরুর তলে
            দীর্ঘতম হলে
দেখেছি- ধনেশ পাখির ঠোঁটে
    যথামৃত পিপাসারা
        তথামৃত কবিতা হয়ে ওঠে;

ফের ভাবি, কবিতায়ও কি হান্ড্রেডপার্সেন্ট
            অভিপ্রায়টা ফোটে?
আমি কি নিক্ষিপ্ত নই- ধনেশ পাখির ঠোঁটে?

রহস্যজন্ম

ডাঙায় বাচ্চা রেখে
কুমির নেমে যায় জলে।
কোনও কোনও কথা
প্রকাশিত রহস্যচ্ছলে।

আমি সে কথার অর্থ
ভাবি নীল, হয়ে যায় লাল।
চকের গুঁড়োতে লেখা
ব্লাকবোর্ডে শীতের সকাল।

পদ্য, তুমিও মারো?
মার খেয়ে মরে যাই,
আমি আবার জন্মাই;
জিতে দেখি বিজিত এবারও...

এবারও... দেখতে দেখতে
কবি হয়ে উঠি-
এবারও আমার মধ্যে
খসড়া, কাটাকুটি;

এবারও চোখের জলে
ফেলেছি গভীর জাল!
কিন্তু দেখি মুছে গেছে
ব্লাকবোর্ডে লিখিত সকাল।

শরীরে আগুন রেখে
একদিন কাঁপাকাঁপা শীতে,
আমার চিৎকার ছিল
নিদ্রার অতলে... নিভৃতে

নিদ্রা, তুমিও মারো?
মার খেয়ে মরে যাই
যথারীতি দেখা যায়
আমি, জন্মেছি আবারও।

দারুণ দিনের সূর্য
হারিয়ে যাচ্ছে অস্তাচলে
লিখব না যে পদ্য, তাই
প্রকাশিত রহস্যচ্ছলে?

দেখব না যে দাহ, তাও
দেখানোর ভার নিই, যথা
শরীরে আগুন মেখে
কেঁপে কেঁপে যায় রহস্যকথা!

রহস্য তুমিও মারো।
মার খেয়ে মরে যাই
এইবারও দেখা যায়
আমি, জন্মেছি আবারও।

প্রাচীধরিত্রীর কবিতা

প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস; সব বাতি এখনো নেভেনি
প্রাচীধরিত্রীর ছাওয়াল, ঠিকঠাক কিছুই হলো না।
হয়তো দরজা হল, কিন্তু তার জানলা হল না
আহা কত মেঘ কত আকাশ কত বালারা উড়ে গেলো।

বালেশ্বর বাল আমি হরিদাস পাল, না-তার ছাওয়াল?
আনন্দ ভিক্ষার নামে, হাতভরা হাহাকার ফুটিয়ে ফাটিয়ে
            তাকেও কবিতা বলেছি?
আমার হাতের তৃষ্ণা, জানো, শূন্যতাকে ধরতে ধরতে
    কতবার ধরেছে আগুন?
        আঙুলেরা পুড়ে পুড়ে গেছে!
আমি তাকেও কবিতা বলে, বয়ঃমন্ত্র ধরতে চেয়েছি-
    ধরতে না পারি, ছুঁতেই চেয়েছি।

যথারীতি ফুলের যোগ্যতা নিয়েও কাশফুল বড় বিস্মরণশীল
                    বসন্ত উৎসবে-
সেই কাশও হতে পারিনি, গাঙপাড়ে শুধু শুধুই বসে থেকেছি
নদীর রচনা লেখাদিনে, আমিও কিছুদিন কিশোর থেকে দেখেছি।

ভ্যাবসা কবিতাবাসনা নিয়ে, আমি আসর থেকে উঠে গিয়েছি।
হয়তো কবিতা হয়নি, কেবল মুখের ভাঁজরেখারা আরও
            সামনের দিকে চলে এসেছে।
নিদেনপক্ষে আমি পাখিও হতে পারিনি, পাতাও না
অথচ সেদিন হরিয়াল-লুপ্তির স্মারক লিখতে গিয়ে
            ‘ঘুঘুরা কোথা” ভাবতে ভাবতে
            অবশিষ্ট গ্রামান্তের দুপুরে নির্জন থেকেছি
বলা যায়, অস্তিত্বগান কুড়িয়ে ফিরেছি

এবং এ নিয়ে অনেকে লেখে, কিন্তু আমি লিখতেও পারিনি

এদিকে আমার লেখারা, অলিখিত থেকে থেকে একদিন
একদল বকের সঙ্গে, ঝিলের সন্ধানে গিয়ে
        ফিরে আসতে না দেখে
উৎকণ্ঠা প্রতিযোগিতায় আমি শ্রেষ্ঠ হয়েছি।
তবু মেঘেদের কেউ হয়ে উঠতে পারিনি। দু’একবার ভেবেছি
            মেঘ মারুতি না মার্সিডিজ?

প্রাচীধরিত্রীর দিকে শুষ্ক নদীভাবনায়
    বিদেশি টাকায় উন্নয়নের ব্রিজ
দেখতে দেখতে বা সিরিয়াসপ্রেম ভাঁজতে ভাঁজতে
আমার জন্যে যারা দাঁড়িয়েছিল, তাদের সঙ্গেই
        যোগাযোগ হয়নি। ফলে
প্রতিদিনই সভা করি হয়তো কেউ দেখছে না এমন
            বৃক্ষের তলে

হয়তো কয়েকটি কবিতা ঠিকই
    নদীদের সঙ্গে নদী হয়ে বয়ে চলে...
                এই যা।

বৃষ্টির দিনে প্রেমিক / গেরিলা

কবিতা        বৃষ্টিপ্রিয় দিনে
কি চাও        প্রেমিক / গেরিলা?
আমি তো      পাহাড় সমান উঁচূ
আমার         বুকের মধ্যে টিলা...

হঠাৎ-ই          হঠাৎ জানাশোনা
আগে কী         দেখাও হয়েছিল?
ঘূর্ণি              ঘুরতে ঘুরতে ঢেউ
বাতাসের        সুনাম বয়েছিল!

তা শুধু         আমার মধ্যে চোরা
তা শুধু         বহনযোগ্য টান
তা নিয়ে        কবিতা গাঁথতে গিয়ে
ভাবিনি         কবিতার বোন গান

ভাবিনি        আবার দেখা হবে
এতসব        ছাঁটলাগা শিরশির
মেঘময়        ঘটনাপঞ্জি বলে
‘অনড়        তুই কেন অস্থির?’

সত্যি           ঘুমের মধ্যে শিশু
শিশুটির        হাতপা বড়, তবু
তাকে আজ     মাতৃক্রোড়ে তোল

অথবা         অন্য প্রতিচ্ছবি
দেখেছ         ধূপলাবণ্য ধাঁধা
সূচনায়        শিলাখণ্ড ভেবে
ভাবনা         আপন সুরে বাঁধা

সে বাঁধা        উৎরে যেতে পারি
কোনওরূপ      সামান্য সংকেতে
যতজল         বর্ষণে বর্ষণে
চিরকাল        অর্থকরী, ক্ষেতে

ক্ষেত তো       ধানের, অভিজ্ঞঘানের
এদেশে          কবিতামাখা দিনে
কত কী         হারিয়ে যাওয়া, ভুলে
হারানো         পথ নিতে চাই চিনে

এবেলা          জানার উচ্ছে খুব
রহস্যে          ছন্দোবদ্ধ টিলা
কবিতা         বৃষ্টিমাখা দিনে
আমি সেই      প্রেমিক/গেরিলা?

আউটডোর থেকে

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী; উধাও হতেই বাকি আছে
বিষণ্নপ্রধান ওই চরিত্র, ওই আমাদের
    মিডলক্লাস অভিনেত্রী, নায়িকা নায়িকা। ওকে
অপলক দেখে নেওয়া যায়

যেমন এই মুহূর্তে, অভিনেত্রীটা এক সদ্যমৃত বুলবুলির ঠোঁটে
নেইলপালিশ করা আঙুল বুলিয়ে দিচ্ছে...

আর তুমি নির্দেশক, তোমার নির্দেশ পেয়েই
            ভোরবেলা
নির্দোষ পাখি কিনে হত্যা করা হলো?

চিত্রনাট্যে আমি এমনকি লিখেছিলাম?

Saturday, August 22, 2009

ব্যস্তকর্মসূচি

বউ বলতে গেলে আমাদের কারওরই হয়নি আমরা কারা সিঁড়িতে কজন বিড়িতে ভজন ডজন পদ্য পাড়ি ডিমের মতো... কিন্তু ডিম আগে না মুরগি আগে কুসুমবাগে মোরগ জাগে মোল্লা ডাকে এরই ফাঁকে আনন্দঘোর বিমুখবাসর সন্ধ্যা এসে একটু বেসে আর বাসেনি চলে গিয়েছে রাতের ফাঁদে আন্ধাবাদে আমরা কমুখ অমুক তমুক বিষের ঝিনুক ভাবছি দেশের সব সুধিজন আমাকে চিনুক কিন্তু চিনেও অর্থ তো নেই স্ত্রীবিনে দাম্পত্য কথা সত্য কোনও অসুখে কথাই পথ্য যৌনতত্ব সর্বোপরি হাতেই খড়ি... খড়ি না পাথর? বেদনা-কাতর কবিতা লেখা কবিও একা ঘুমায় জাগে খায় আর হাগে?

মিল-ঝিলের কবিতা

আহমাদ মোস্তফা কামাল বন্ধুবরেষু
দিগন্তে বাঁধের দিকে, আজ সূর্যাস্তের মায়ালিপি
দেখে ফেললাম; আখড়ামন্দিরের পাশে বাসা ভাড়া নিয়ে
এই হচ্ছে প্রথম লাভ। যদিও শাহবাগ থেকে রিক্সাকে বলি:
‘ছাতিমসজিদ যাবে? রায়ের বাজার।’ এইবার পাঠক
স্মরণীয় বধ্যভূমি পাড়ি দিয়ে নিয়ে যাই আমার সনেটে-

কিন্তু বাক্যের তোপে, তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি সনেট ছাড়িয়ে
অন্য এক প্রণয়নে, যেখানে বাঁধের সঙ্গে সূর্যাস্ত আলাপ সারছে,
আলাপের মধ্যে উঠে আসছে দিনান্তের লাল দীর্ঘশ্বাস;
পশ্চিমের আকাশ তা ফালি ফালি করে জমিয়ে রাখছে

আর এক স্বপ্নমুখো যাপন, প্রকল্পের জীবিকাশেষে
ইতিহাসের সঙ্গে ভবিষ্যতের কলাবরেশন ঘটিয়ে
জানিয়ে দিচ্ছে- এই হল জীবন, এই হল মুহূর্ত, মুহূর্তই বর্তমান

অথচ বর্তমান চিরকালই একা, দূরারোগ্য, বাধ্যতামূলক
বহনযোগ্য আকাশ; যেহেতু যেখানেই যাই মাথার ওপরে
এক আশ্চর্য নীল ছড়িয়ে থাকে- সেই নীলটুকুই কবিতা!
আমাদের ডাইরির যে কয়পৃষ্ঠা নীল, নীলাভা সেই মিলটুকুই কবিতা!

যেসব পাখিকে দেখলে, কোনওএক ঝিলের কথা মনে পড়ে-
    বড় বড় সমুদ্রের পাশে, সেই ঝিলটুকুই কবিতা!

বিবাহসংকেত

সংকেত, তুমি আজ কোন ভাষায় শিক্ষিত হয়েছ?
তুমি কোন করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছ
        বৃথাময়ী বিদ্যাপীঠে?
আমি প্রাচীনির পুত্র, আমার পিতার নামে
একটিও স্থাপত্য নেই, সংঘটংঘ কলাকেন্দ্র নেই
আমি দুপুরের কোনও অর্থই খুঁজে পাচ্ছি না

কিন্তু দুপুর, এমনই দুপুর
বাতাসে বাজছে বাতাসি নূপুর;

আমি গাছদের পাশে বসে, বুঝতে পারছি না
    এরকম পাতাঝরা দেখানোর অর্থ কি?
আমি মাছদের চোখে জল ঝাপসা লাগায় কিনা
        নিজ চোখে সে-জল মেখেও মীমাংসা পাচ্ছি না

সংকেত, সামান্য আকার দাও
ভাঁড়ারদিবস: যা খুশি নিয়ে যাও;

এরমধ্যেই আমার মিশন: আমি যে কোনও বাতাস থেকেই
নারীত্বের তাপসিদ্ধ নিঃশ্বাস ধরে নেব
এক একটি আঙুলকেই মাইলস্টোন মনে করব

যেহেতু কবিতার মধ্যে ডুবে ডুবে এতবার মাছ হতে যাই
বনের মধ্যে দাঁড়িয়ে, রৌদ্রজন্ম পাই!

প্রাচীন আকাশ, থানকাপড়ের মেঘ
ও মেঘ, অমৃত বারিধি জলে, যেতে যেতে
তরুণ কবির ঘরে তুমি একটু ঝরে যাবে না
        বিবাহসংকেতে?

ব্যাচেলর ছন্দের কবিতা

সে এক ব্যাচেলর ছিল
ছিল কি, আছেই।
তার ভাষ্য, কাঁচাবাজারের মাছে
মরাচোখে ফুঁসলায় তাকে

এই নিয়ে পদ্যকর পদ্য লিখে থাকে।

তো সেই ব্যাচেলর ছেলে
ভাড়া থেকে থেকে যেন ভাড়াটেপ্রায়;
কিন্তু সে অচিরেই জানে
এই দেশে বাস করে উঁকিসম্পদ্রায়

যারা কিনা ঝুঁকিহীন ঝাঁপ ভালোবাসে
তাদের যে কোনও গলি, মসজিদের পাশে...
তারা উঁকি দিয়ে থাকে
        তারা ঠোঁটে খবর মাখে

বলো বলো পদ্যকর, পদ্য আজ কোন দিকে যাবে?
ব্যাচেলর, কাঁচাবাজারের মাছ, মরাচোখ, মসজিদ,
            উঁকিঝুঁকি দেখে
তার মধ্যে পদ্য লিখে কি আর তুমি পাবে?

বিবৃতি

আল্লা ধরার আগেই
    ধরা খাই পুলিশের হাতে!
কি এমন স্বপ্ন, সম্ভাবনা
        আর কারুবাসনাতে
            ভরা, পুলিশের হাত?
পুলিশ ধরেছে, কারণ
    আমাদের পকেটে ছিল অ্যাবনরমাল রাত।

আমারে কী চাপকে দেবে, দাও! আমি
    ওই মালঞ্চফুলঞ্চ বনে
        ছাত্রীনিবাসের পাশে
            ঘুরি ফাও ফাও!

পুলিশের ধারণা, যারা... যারাই বা
            আমাকে চেনে
তার মধ্যে অন্ধকার শীর্ষস্থানীয়-

ফলে আমি ধরা খেয়ে যাই, এ খবর ছাত্রীনিবাসে জানিও... না
আর শোনো, যদি আমি রিমান্ডেই মরে যাই,
আমারে ওই মালঞ্চফুলঞ্চ বনে
    আলগোচে পুঁতে দিও

চাষ/পালন

আমাদের সম্পর্ক নিয়ে একটি কবিতা
        উৎপাদনের রাজনীতি হয়ে গেল?
ফলে কিছু কবিখ্যাতিও হলো

আলাদা আলাদা করে বুঝে উঠলাম
চাষ আর পালন সমার্থক নয়।

পূর্বপুরুষের অভিজ্ঞতায়, আমরা
যা যা পালন করি, তুমি তাকে
    চাষ বলে অভিহিত করো;
ফলে তোমাদের মাছচাষ, মুরগিচাষ
এমনকি পাখিচাষও দেখে যেতে হয়-
কিন্তু চাষ আর পালন অভিন্ন নয়

যেমন, আমার মধ্যে কবিতা পালনের ঝুঁকি
ফুঁসলে উঠছে, আমি স্বপ্নের পাশে পালন করছি যন্ত্রণা,
আর তুমি চাষের আলোকে
    উৎপাদন করছ আমাদের সম্পর্ক, রীতিনীতি
                দূরত্ববার্ষিকী!

ভাঙাসাঁকো, অগ্নিকণা

দেখতাম, পাড়ায় পাড়ায় মেঘওড়াদিন এসে গেছে!
বাঁশের সাঁকোটি ভাঙা! খালের ওপারে বাড়ি
        দুর্গাদের? রাত নেমে আসে...
আমার আবাল্য চোখ, প্রশ্ন ভালোবাসে।

দেখলাম, বাতাসে বাতাসে অপমান ফুটে আছে!
পরম সন্ধ্যায় দুর্গা কাঁদছে, কিন্তু দুর্গার চোখে
            জল নেই, শুধু ভয়!
কী শংকিত কী লজ্জিত তখন, দুর্গাদের পরিচয়!

হঠাৎ, হঠাৎই দেখব যে, দুর্গারাও চলে যাচ্ছে শশীদের মতো- সীমান্তে
একফোঁটা অশ্রু ফেলে রেখে। অশ্রু, ভাঙাসাঁকো না-অগ্নিকণা?
            দুর্গাদের ভিটেখানি জ্বলে-
আমি সেই অশ্রু থেকে জেনে নেব, দেশ কাকে বলে?

কবিতা বিক্রির কবিতা

যে যাই বলুক, আমি বিবাহিত
বাতাস বেগম আমার বউ।
আমাদের সুখের সংসার; যাচ্ছে! বেশ
        ঢিলিমিলিই তো যাচ্ছে।
কিন্তু মাঝেমধ্যেই ঝামেলা বাঁধিয়ে দিচ্ছে
আমার পুত্ররা, কন্যারাও। তাদের ভাষ্য-
    তারা নাকি দুধেভাতে নেই
        আমি অসমর্থ পিতা?
আমি নাকি তন্দ্রা ধরে বলি:
‘এই নে, হাটে নিয়ে বেশি দামে বেঁচে আয়
    আত্মায় প্রণীত আমাদের টাটকা কবিতা’

বলেন, একজন স্বায়ত্বশীল, বিবাহিত লোক
        এসব বলতে পারে?
কিন্তু আমার পুত্র-কন্যারা এত বেয়াড়া আর
            বিপ্লবী যে
ওরা লিভটুগেদার চায়, ওরা ভাইবোনেরাই
        দিব্যি অভিসারে...
ফলে, আমার দিব্যভাবনা বাড়ে

সিদ্ধান্তে আসি, আমি ওদের নাম রেখেই কি
            ভুল করেছি?
পুত্রদের নাম রেখেছি বাক্য; প্রথমটা প্রথম বাক্য
তারপরেরটা দ্বিতীয় বাক্য, তিন নাম্বারে তৃতীয় বাক্য!
কন্যাদের নাম রেখেছি ওদের মা’র নাম অনুসারেই-
                ‘হাওয়া’
বড়টা দস্যিহাওয়া, মেঝটা শান্তভারি, তারপর হিমেলহাওয়া
এবং কদিন আগেই যে জন্মেছে, ওর নাম হুহুমনা,
আজকাল তো হুহুমনাহাওয়ার জন্যই আমার এত টান
                    এত ভালবাসার গান!
কিন্তু প্রণীত বাক্য, মাই সন
এন্ড প্রণীত হাওয়া, মাই ডটার-
আজকাল কারওর আচরণই আমার আর ভালো লাগছে না

চতুর্থ বাক্য ঘরে ফিরছে না পাঁচদিন,
হাওয়াদের মধ্যেও একজনকে পাওয়া যাচ্ছে না;
বধু আমার বাতাসি বেগম পালিয়ে গেছে
অথচ আমি বিবাহিত... অযোগ্য এক পিতা!

আমি নাকি সন্ধ্যা দেখেই বলি:
এই নে, সূর্যাস্তের একটু আগের আকাশ থেকে
    পেড়ে আনা, দগ্ধীভূত, লালচে কবিতা;
এটা ঠিকই বিক্রি হয়ে যাবে
        গ্রন্থে গ্রন্থে, প্রত্যন্তে-
            নিয়ে যা, হাটে নিয়ে যা

হাসিসমীক্ষণ

দাঁত ওঠেনি-যে-শিশুর হাসি আমি গতকাল দেখেছি
আজ দাঁত-পড়ে যাওয়া বৃদ্ধের হাসি দেখলাম
এবং আমি হাসিসমীক্ষক হয়ে উঠলাম

যারা বৃদ্ধও নয় শিশুও নয় কিন্তু খুবই হাসতে জানে
তাদের হাসির মধ্যে লক্ষ্য করে দেখি-
একএকটি হাসিতে তারা একেকরকম
        ব্যঞ্জনা ছড়িয়ে রাখছে;
কোনও কোনও হাসিকে, হাসি হিসেবে
বুঝে উঠতেই আমার সময় লেগে যাচ্ছে

কোনও কোনও হাসি এত ক্লান্ত, অপমানিত যে
            তাকে আর হাসিই বলা যাচ্ছে না

নভেম্বর সন্ধ্যা, ২০০১

আমার ক বন্ধুর সনে দূরত্ব বেড়েছে এত, যে
দুই টাকার খাম কিনে চিঠিও পাঠানো হয় না!
আমি গতকালও ম বন্ধুর খোঁজে
ঘুরে ঘুরে শেষে মেনেই নিয়েছি- অধমের বন্ধুত্ব সয় না!

আমার গ বন্ধুকে আমি গ্রামেই হারিয়েছিলাম!
পরে, শহরের সন্ধ্যা ঘেঁষে দ বন্ধুকে পাই।
যে কারণে আশৈশব আমি অন্ধকারে বন্ধুত্ব ছিটোতাম-
যদি তারা জ্বলে ওঠে, নীল তারা: এই কসমো-আশায়

তবে, আমার র বন্ধুকে আমি কখনও বলিনি-
বিপুল বরাদ্দ করা এত এত বন্ধুত্বের মানে কি?
এরই ফাঁকে আমি হয়তো অ বন্ধুকে বন্ধুই ভাবিনি
এতকাল; যাদের সঙ্গে কোনওদিন কোনও কথাই হয়নি
            হয়নি দেখাদেখি-

সূর্যাস্ত-মেঘের নিচে, ত্রপাশ্বরী নদীতীরে
যাদের সঙ্গে দাঁড়াতে পারিনি, ইহকালে আর পারব না-
তারা কি ন বন্ধু? নিহিত বর্ণের এই রহস্যপর্দা ছিঁড়ে
আমার মধ্যে বুদবুদ করে ওঠে বন্ধত্ব-ধারণা;

যে কীনা মেঘ, স্বভাবে মরাল, সাধুপতি কিংবা কিছুই না, বর্ণহীন
কোনও বিকেলের ঢেউ, সারল্যনির্ঝর, তাকে
            বলি: বন্ধু। কিন্তু
কিভাবে বলব একুশ শতকের উপযোগী, সম্পূর্ণ রঙিন
মার্কিনি কবির মতো, শান্তিদিবসের বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে গিয়েও
যে কখনও দেখবে না- পৃথিবীর প্রতিটি লাশের বুকে আমেরিকান
                    গুলি ফুটে থাকে!

এদিকে আমার বন্ধুরাও একে একে ব্যাধের চাকরি করা দেখাচ্ছে আমাকে।

গোধূলিকল্যাণ সংঘের কবিতা

একদিন, ধুলো নিয়ে মুঠো মুঠো কবিতা লিখেছি।
একবার, কাব্যসমালোচনা করতে গিয়ে, আমারই লেখক-বন্ধু, লিখল:
...কবি, মরমী প্রণেতা; কিন্তু তার একটি কবিতার মধ্যেই চব্বিশবার
                    ধুলো পাওয়া গেছে...’

তাই তো! একটিমাত্র কবিতা পড়তে গিয়ে, যদি চব্বিশবার
        ধুলো ঢুকে পড়ে চোখে, নাকে, মুখে
এটা কে সহ্য করবে? কোন দুঃখে?

তারপরও তলে তলে, আমি কিন্তু ধুলোচর্চা করেই চলেছি।
রিয়েলি, আমি এখনো ধুলোর মধ্যেই গেরুয়া সম্ভাবনা
                দেখতে পাচ্ছি;
যেমন, প্রত্যেক জোছনাতেই আমি লক্ষ্য করছি-
    গৃহত্যাগ কীরূপে জরুরি?
ধুলোকে মাঝেমধ্যে, ধূলি নামেও ডেকেছি। কেননা
আমার মনে পড়েছে, সন্ধ্যার সামান্য আগে, ধুলোর মধ্যে
হাঁটতে হাঁটতে গরু খেদিয়ে বাড়ি ফিরছি
এবং হাই ইশকুলে ওঠার কিছুদিন পর, আমি জানলাম
        গোধূলি: হোয়াটস্ কলড্ গোধূলি?

আমি গোধূলির প্রেমে পড়ে যাই! কিন্তু একদিন
সেই গোধূলিকে আমি হারিয়ে ফেলি
এবং আমি শহরে চলে আসি এবং আমি
গোধূলির কথা ভাবতে ভাবতে, ধূলিমলিন হয়ে যাই;

ভবা, সাধে কি আর ধূলিবিদ্যা শিখি?

এবং আজ, ধূলিতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। রাস্ট্রের যে কোনও ফাইলে
যে কোনও সমীক্ষায় ধুলো ঢুকে গেছে।
এদিকে আমি, গোধূলি হারানো কবি
প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে, ঝাঁপ খুলে বসে থাকি
        প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এক
            গোধূলিকল্যাণ সংঘের...

Friday, August 21, 2009

আর কতকাল?


আলীম আজিজ প্রিয়বরেষু
লেখকেরা মনে করে, সে লিখেই সব জানিয়ে দিচ্ছে
অর্থাৎ লেখক জেনেছে আগেই

পাঠকের অবস্থা হচ্ছে- পাঠক পড়তে পড়তে
                টের পায়
পাঠ্য তার পুরোপুরি অজানা ছিল না

তবু সে পড়ে, আর লেখক লিখতেই থাকে
আমাদের ছোটনদী মরে যায় বাঁকে

আত্মজিজ্ঞাসা

দুপুরে, বনের মধ্যে আগুন জ্বলে। দেখলাম
মানুষের অনেক কথাই পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

দমকল যথারীতি ব্যর্থ। কাকে বলে দাবানল?
ধর্মসংক্রান্ত প্রেম জটিলতা নিয়ে
এক হিন্দুমেয়ের মাটিচাপা দেখলাম
        শ্মশানের পাশে;
বলা যায়, পর্দার বাইরেই দহন ছবিটি দেখলাম।

সারাদিন, রোদ্দুর অভিনীত ঝাঁ ঝাঁ অপেরায়
            অন্তরঙ্গ মাখামাখি হলো;
ইতিমধ্যে বিতর্কিত- দ্য ফায়ার বাই মীরা নায়ার!
ইতিমধ্যেই মরুভূমি আরেকটু বিস্তারিত হলো;
        নদীহীনতার নিবিড় কারণে-
আমি বহ্নিবিশারদ হয়ে গেলাম!

তবে কি আমি পিঁপীলিকাদের সঙ্গে
            পাখাপ্রাপ্ত হচ্ছি?
না-ফিনিক্সের উপর পিএইচডি করছি?

কথামৃত মৃতকথা

প্রতিদিন একটি কথা, প্রতিদিনই অজস্রতে বলি
প্রতিদিন একটি লেখা, প্রতিদিনই দাহশাস্ত্রে লিখি!
আবার শুরুর দশক, শুরু হল ঝাঁক ঝাঁক কথা-
সে কথা কি ফুলস্কেপ? -পাঠানো সডাক কবিতা?

কবিতা লিখেছি কালো... পরিষ্কার রাতের আকাশে।
আগে যে তারারা ছিল, তারা কেউ ঝরেমরে গেছে;
গৃহের সন্তান আমি, মাঠে গিয়ে নেশাসক্ত, মৃত
যত তারামাছ, কুড়িয়ে নিয়েছি... যারা পড়েছিল!

দূরের পঙক্তিধুধু, রহস্য বিলীন করে আসে
আসমানী বিছানায়, কবি ফুটে ওঠে নক্ষত্রেষু
ইতিহাসের সুনীল পৃষ্ঠায়... অজস্রের কাহিনী
প্রতিদিন লেখা হয়, যাই-ই লিখি, লিখলেই মৃত

এত এত ছাপাগ্রন্থ, অছাপা যে-হাওয়া আছে, তাতে
কথামৃত মৃতকথা জ্বলে ওঠে আকাশের রাতে

ডটকম পোয়েট্রি

Justify Fullপিতাপুত্র
পিতার বিরুদ্ধে পুত্র, এই তবে
প্রকৃত লড়াই!
কেননা দুজনই জন্মেছে
একই মুহূর্তে, যেন ভাই ভাই।

আশার আলো
দেখা যাচ্ছে, আমাদের পরেও
সাধক আসবে
তাই সিদ্ধিরও প্রয়োজন থাকবে

বলা যায়, আগামীতেও সেইসব মানুষ জন্মাবে
যারা শুধু তামাক বিক্রির টাকায়
কেউ ওষুধ, কেউ চাল কিনতে দোকানে যাবে

মাপামাপি
মডেলকন্যারা মেপে মেপে
হেঁটে হেঁটে ঘুরে যাচ্ছে
টিভিস্ত্রিনে উড়ে যাচ্ছে-
তাও দেখা যায়

যদিও মাপামাপি করে
মনোহরী দোকানদার ছাড়া
কিছুই হল না আমাদের পরিচিত
উমাচরণ কর্মকারের নাতি

এক্সসেপশনাল
ঘরে ঘরে ঘোড়ার পোস্টার দেখে
আমিও ব্যাচেলর-ঘরে
ঘোড়ার পোস্টার সেঁটেছি

লুক, ঘোড়াটির লিঙ্গ উত্থিত...

ইংরেজিতে একটা কথা আছে
দেখলে, কত কিছুই না দেখা যায়
দেখাও শিল্প;
একলোক, ঝাঁকামাথায়
সূর্যাস্ত নিয়ে ফিরছে। দেখছি...
এই গাঁয়েরই একজন গোমূর্খ, গাইগরুর সঙ্গে
যৌনকর্মকালে ধরা পড়ে গেছে। বিস্মিত
মানুষেরা ছি: ছি: করছে আর শিক্ষিতরা বলছেন:
দিস ইজ রিয়েলিটি, ইংরেজিতে একটা কথা আছে
সেক্স ইজ গুড ফর হেলথ্

শীতকেলে কবিতা
সবজিপ্রধান এক এলাকার রান্না আমি জানি
আমার বউ কুয়াশাবিধৃত অঞ্চলের রহস্যকুড়ানি

ভোরবেলা, সন্ধ্যায়
গাছি যাচ্ছে রসের সন্ধানে, সেই রস বিক্রিপূর্বক
আমি ভাবের দোকানি

পশুপক্ষির ছানা
বিদ্যালয় অনেক দেখেছি, কিন্তু চোখেই
পড়ল না নিদ্রালয়;
রিয়েলি আই এ্যাম টায়ার্ড, ঘুমোতে চাই
যথা, যেখানে জায়গা হয়;

যেখানে বলতে আগেও বলেছি, এখনও বলছি
বিছানা-বালিশ? না-না
সুমনা আপার বুকের মধ্যে, এই যেভাবে
ঘুমোয় পশুপক্ষির ছানা

প্রমাণসাপেক্ষ
লিপস্টিক
নারীরা ব্যবহার করে, ঠোঁটে
পুরুষেরা চেটে খায়, খেলেই
লিপস্টিক হয়ে ওঠে

ওম্ বৃষ্টি! ওম্ বৃষ্টি!!

শেষরাতে, কখন যে বৃষ্টি নেমেছে- টেরই পাইনি। ভোরে, যখন ঘুম ভাঙছে, দেখি বৃষ্টির পর বৃষ্টি আর বৃষ্টি! রোদ-টোদ চোখেই পড়ে না, শুধু রোদের ধারণা জড়িয়েই দিন ধার্য হয়। আজ, বৃষ্টিবার! মানুষের সাধ্য নেই- বৃষ্টিকে অস্বীকার করে। বৃষ্টি হবেই, হয়তো আনন্দে, হয়তো বিষাদে

পোড়াদহ ইস্টিশনে একবার বৃষ্টি দেখেছিলাম। হায় রে বৃষ্টি! বাণমারা বৃষ্টি! ট্রেন এলো, ট্রেন গেল; দেখা গেল- তিনজন যাত্রী ইচ্ছে করেই ট্রেনে ওঠেনি। তাদের একজনকে আমি জানতে চাই, ‘কিরে ভাই... ফেল করলেন না কি?‘ -‘নাহ, এই ট্রেন যে শহরে নিয়ে যাবে, গিয়ে দেখতাম, সেখানে হয়তো বৃষ্টিই হচ্ছে না; আসলে, আমরা ঠিক মিস করতে চাই না...।‘ ‘এই বৃষ্টি কি থামবে না?’ ‘না, এই বৃষ্টি কোনওদিন থামবে না।’

বলাই বাহুল্য, সেই তিনজন, তাতে দুজনই ছেলে আর অন্যজন মেয়ে। তারা হয়ত অনার্স, তারা একসঙ্গে বৃষ্টি দেখছিল?

আরও একবার বৃষ্টির মুখোমুখি পড়লাম। যথারীতি ভিজেও গেলাম। শুধু কি আমিই? বৃষ্টিও আমার মুখোমুখি পড়ল এবং ভিজে গেল। এ ব্যাপারে বকুলতলা সাক্ষী থেকে গেছে

কত কী বলব আর? জীবনে অনেক বৃষ্টি দেখেছি এবং আরও দেখতে হবে। ভাবছি, বৃষ্টিসংখ্যা লিটলম্যাগাজিন ছাপিয়ে ফেলব। তার মধ্যে থাকবে যত বৃষ্টির গল্প আর গল্পের বৃষ্টি। এছাড়া যারা রাতে ঘরে ফিরে, একা একা বৃষ্টিহীনতার মধ্যেও বৃষ্টি রচনা করেন, সেই একারাই বৃষ্টি লিখবেন প্রকাশিতব্য বৃষ্টিসংখ্যায়- বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন রকম বৃষ্টি এবং থাকবে প্রচণ্ড ঝরঝর সম্পাদকীয় এবং ঝিরিঝিরি বিজ্ঞাপন... বৃষ্টি হারিয়ে গেছে, বৃষ্টির গায়ের রঙ সজলা, সে রিমঝিম করে কথা বলতে পারে

প্রগাঢ় বৃষ্টিবাসনার দিন পেরিয়ে গিয়েও, বৃষ্টি নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা হবে, আর্দ্র-গবেষণা চলবে। মানুষ বৃষ্টিকে বুঝতে শিখবে এবং বৃষ্টিও মানুষকে জানতে পারবে: প্রতিশ্রুতিশীল মেঘেরা কেন পালাতে পালাতে হঠাৎ থমকে হাউমাউ করে কাঁদে?

সর্বোপরি, আমার বৃষ্টিভাবনা বহুদূর ছড়িয়ে পড়ছে আরও অস্পষ্ট আরও ঝাপসা বৃষ্টির মধ্যে। চরমার্থ ফোটায় ফোটায়- এই সত্যজ্ঞানে, আজ আমি বৃষ্টির সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে স্বভাবতই, জলবিন্দু হয়ে যাচ্ছি এবং বৃষ্টির কবিতা হতে যাচ্ছি!
ওম্ বৃষ্টি! ওম্ বৃষ্টি!! ওম্ বৃষ্টি!!!
জগতে সকল প্রাণী বৃষ্টিলাভ করুক।

Thursday, August 20, 2009

প্রচ্ছন্নকবিতা

এই মাঠ শুয়ে থাকে আরও এক মাঠের শিয়রে।
আমরা সেই শিয়রের মাঠে যদি যাই
জানব, অসংখ্য মাঠের সঙ্গে
আমাদের দেখাই হবে না

আর সেই না-দেখাতে গুপ্ত আছে প্রচ্ছন্ন একটি গল্প:
যার মধ্যে স্রেফ কিছু বিরহ লুকিয়ে থাকে;
যেমন আমি জানতেও পারিনি, গতরাতে
কার কার বিয়ে হয়ে গেল?
কোন স্রোত কোন দিকে
বয়ে বয়ে গেল?

শুধু জানি, ধারণা যখন ক্রমগূঢ়মান হতে হতে
ধর্মগ্রন্থ হয়ে যায়, একদিন
কেউই জানে না এক প্রচ্ছন্নজাতকের মধ্যে ফের
কবিজন্ম ফোটে; ফুটে ওঠে ডুমুরের ফুল

সেই ফুলও ঝরে-মরে লুপ্ত হলে আহা
সে খবরও জানে না যত পরিপাটি পুষ্পপ্রজাতি;
সব জানে শুধু এই মাঠ, শিয়রের মাঠ।
সেইখানে, আমরা যদি যাই-

হয়ত জানাই হবে না, কোন ঘোর অশ্রু নেমে এলে
এক প্রচ্ছন্নঝিলের জন্ম হয়?
যার মধ্যে স্রেফ কিছু ব্যর্থতা লুকিয়ে থাকে!

খারাপ ছাত্র হবার শাস্তি

সূর্যাস্তকে পাঠ্য করা হল, মাঠশালায়

মাঠশালা আবার কি? তবে পাঠশালা ছিল-
আমরা বৃষ্টির দিনে, বইকে বুকের জামার মধ্যে লুকিয়ে
পাঠশালা থেকে ফিরতাম
কিন্তু আমার হাঁটুতে খুব ব্যথা জড়িয়ে থাকত

কারণ আমি পড়া পারতাম না
পড়া বলতে, ঈশা খাঁ-মানসিংহের যুদ্ধ, মৃত্যু...
চন্দ্রঘোনা কোথায় অবস্থিত? শৈলকূপা কি জন্য বিখ্যাত?
ওসমানীর পুরো নাম কি? বাঙলা সাহিত্যে
পল্লিকবি বলা হয় কাকে, কেন? লক্ষ লক্ষ প্রশ্ন

বলিহারি? শিশুরা সব বুড়োদের প্রশ্নের উত্তর দিতেই
জন্ম নেবে আর বুড়োদের কীর্তিকাণ্ডের ইতিহাস
মুখস্থ করে যাবে?

কিন্তু আমি ওসব মনে রাখতে পারিনি
যাকে বলে, পড়াই পারিনি। তাই
আমাকে স্যার নীলডাউন করিয়ে রাখতেন;
আমার হাঁটুতে ব্যথা জড়িয়ে যেত
ঘণ্টা বাজলে দৌড়ে যেতে পারতাম না;
আমার চোখেমুখে কালো মেঘ জমে উঠত
পরদিন আবার নীলডাউন হত-
ক্লাসের মধ্যে আবার একা, অপমানিত আমি!

সেই থেকে, আমার হাঁটুতে এখনো ব্যথা
কারণ, আমার মুখস্থ ভাল না
ব্রেইন দুর্বল
তা না হলে এই মাঠের মধ্যে এখন, ম্রিয়মাণতার
ব্লাক ছড়াচ্ছে, কিন্তু অন্ধকারের সঙঞ্জা আমার
কিছুতেই মুখস্থ হচ্ছে না
এদিকে সূর্যাস্ত পাঠ্য হয়ে গেছে। সূর্যাস্তের ওপরে
যিনি পিএইচডি করে এসেছেন- বিতর্কিত কুমারী
আমাদের সন্ধ্যা আপা-
তিনিও আমায় নীলডাউন করিয়ে রাখবেন?
মাঠশালাতে?

নিঃসঙ্গজনক

‘নিঃসঙ্গ লাগে নিঃসঙ্গ লাগে’ ‘নিঃসঙ্গ নিঃসঙ্গ লাগে’
একটানা নিঃসঙ্গ
কতবছর লেগে আছে?

নিঃসঙ্গ কি ধুলো? না, হাওয়া? নিঃসঙ্গ কিভাবে লাগে?
নিঃসঙ্গ কি সেই ঠাণ্ডা, প্রতিক্রিয়াশীল পানি- যা গায়ে লাগলে
আমাদের শীত-শীত করে, কেঁপে উঠি এবং আমরা আরও
শুকিয়ে যাই?

দেখে-শুনে-জেনে, আজ একটু জ্ঞান জ্ঞানও লাগে-
নিঃসঙ্গের পাশাপাশি, আর্তি-আর্তি
হাহাকারের বাচ্চারা সব রূপায়িত হাহাকারই হলো!

তাহলে? নিঃসঙ্গ তো লাগবেই। নিঃসঙ্গ লাগার জিনিস!
বরঞ্চ এবার, নিঃসঙ্গের পেছনে লাগা যাক।
কে কে লাগবি, আয়? তুই কি লাগবি, তুই?
(চিৎ হয়ে শুয়েছিলাম, এবার একটু উপুড় হয়ে শুই)

আমি নিঃসঙ্গের পেছনে লেগে যাই। দেখি, ভাইরাভাই
কোথায় যায়?
ভাইরাভাই? না। নিঃসঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কটা যে কী
লিখে বোঝাতে পারব না-
লিখে অবশ্য কোনওদিনই কিছু বোঝাতে পারলাম না;
বুঝতেও পারলাম না- নিঃসঙ্গ কখন জন্ম নিয়েছে? কখন
বেড়ে উঠেছে? কখন বড় হয়েছে...?

ঘুমের মধ্যে পরিত্যাক্ত রাজবাড়ি, পাতানো দুপুর; খড়-কুটো-ঘূর্ণি;
ঘূর্ণির মধ্যে একা, তখন আমার নিঃসঙ্গ লেগেছিল।
শাহবাগ থেকে ফিরতে ফিরতে নিঃসঙ্গ লেগেছিল।
আড্ডায় অনেকে বুশ, অনেকে লাদেন-
তার মধ্যেও নিঃসঙ্গ ঘাপটি মেরে, চেপে ধরেছিল।
নিঃসঙ্গ বনের কাছে, সমুদ্রের ধারে, লোক- থই থই সমাজের মধ্যেও
নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করে নিয়েছিল, সু-দৃ-ঢ়-ত-র
কিন্তু বিখ্যাত ব্যর্থতা আমার, নিঃসঙ্গ দেখতে কেমন
সেটা আজও দেখাতে পারলাম না;
অথচ, নিঃসঙ্গচর্চার তম তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
পেরিয়ে যাচ্ছে
বড়জোর একটি শব্দপ্রাপ্ত আমি, সমীক্ষা শেষে আজ মনে হয়
সেই শব্দটি নিঃসঙ্গজনক

Wednesday, August 19, 2009

কাকের পক্ষে

শহীদুল ইসলাম রিপন, আমার অনেক কবিতার শানে-নজুল-সাক্ষী
মন্ত্রীপাড়ার পাশে কাক
রাস্তায় মরে পড়ে আছে,
কাক বিদ্রোহ করেছিল!

আমার স্পষ্ট মনে পড়ে,
কাকের কোরাস থেকে দাবি উঠেছিল-
পাখিগোত্রে আমরাই পরার্থপর পাখি
কিন্তু কোকিলই মিডিয়াতে প্রশ্রয় পেয়ে থাকে,
পাখিমন্ত্রী আমাদের দেখামাত্র ‘কর্কশ’ বলে ডাকেন।

কিন্তু আমরা তো মাতৃভাষায় গান গেয়েছি;
যেহেতু আমাদের সঙ্গীত বজ্রমুখর
ব্যাকুল নিষাদে;
অনেক বিকেলবেলায় আমরা প্রত্যেকে একা একা
আর্তনাদ করেছি
বিশুষ্ক পার্কের দিকে, কা... কা...

আমার আরও মনে পড়ে, আমিও তো কাক
হতে যাচ্ছিলাম
স্বগোত্রকে ভালোবেসে...! সে সময়ই প্রথম জেনে নিচ্ছিলাম
আর্তনাদের ভাষা;
দুর্ভিক্ষের ছবির পাশেই আমাকে খুব মানিয়ে যাচ্ছিল
আর তখনই আমার মধ্যে দুর্গ বিষয়ে ধারণা লাভ হয়
আমি রাজনীতি বুঝে ফেলি

ফলে, লক্ষ্য রাখবার ছলে, দেখি
মন্ত্রীপাড়ার পাশে
রাস্তায় কাক মরে পড়ে আছে!

এ অঞ্চলের কাক বিদ্রোহ ভালোবেসে?

খসড়ামুখর

পদ্যের সন্ধানে গিয়ে, ফিরে এলো এই লঘুকাল! একে বলে, ভয়ানক ভাবসংকট। কিন্তু বনের বাঘের দিকে লেলিয়ে দেয়া আমার শরীর, শারীরিক ভাষা-উপভাষা ভুলে, মহান থাবার নিচে শিখে নিচ্ছে চাপা আবিষ্কার

কত কী আবিষ্কারের গল্প ছড়িয়ে আছে, বিভিন্ন দেশে

শেষে, আমাকেই লিখতে হলো সাধুগান। ভাবনা বলে, গানের মধ্যেই ঘুমোয় সম্প্রদান। আমি সম্প্রদান লিখে, তাকে পদ্য বলব কোন মুখে? বলব, হাওয়া। গ্রামের দিকের চৈত্রতলায় হঠাৎ ঝিলের পালিয়ে আসা একপাল হাওয়া। আমি হাওয়া-আবিষ্কার শিখে ফেলি। যার যা লাগবে, অঙ্গে অঙ্গে মেখে নে-

দেখে নে হাওয়ার মধ্যে কোনও বাক্যচাপ আছে কিনা?

আছে! এখনও বনজঙ্গল আছে। জঙ্গলে বাঘও আছে। বাঘের গায়ে ডোরাকাটা দাগও আছে... বা এভাবে লিখতে গেলে লিখতে হবে ভাবসংকটের যুগে ইয়াং সোসাইটির অবক্ষয়, ঢিলিমিলি মহাদেশ অর্থাৎ এই অঞ্চলের বাঘের থাবায় ড্রাগও আছে। এদিকে ড্রাগ আবিষ্কারের ফলে, বিষণ্নসংস্কৃতির প্রভাব বাড়ছে, এর ভেতরে কেউ কেউ বলছে গোখরা বিষয়ে... ছিল, সে এক রাধাবরী সর্পিণী ছিল!

শহর থেকে গ্রামে গিয়ে, গ্রামে একটি গোখরা দেখেই, দর্শনং তুরীয়ং জ্বালা বিষময়ী, তুমি মিতালী আপা, তুমি আমাদের দু ক্লাস উপরে পড়তে...

তুমি কত এঁকেবেঁকে যাও- আমি আবিষ্কার করি আঁকাবাঁকা

আবিষ্কার করি খা খা, ভুবনঅখ্যাত খা খা’র মধ্যেও হাওয়া এসে লাগে। হাওয়ারা সব্বাই তরুণী, ঝিলের দিকেই সমিতি করে থাকে, ছিটেফোঁটা কবিতাও ধরে রাখে?

কিন্তু আমি চেয়েছিলাম পদ্যের লাগাম। তাই আবাসিক এলাকার বারান্দায় এল বাঘ! তাই জঙ্গল তাই সর্পিণী আপা, দু’ক্লাস উপরের আঁকাবাঁকা... আপটার অল নিদারুণ পদ্য ছাপলে তিনশ টাকা

Tuesday, August 18, 2009

তুলাবস্ত্র, কাঁকড়ার কবিতা

ক.
বিকশিত হলে বটে, আপত্তিমর্মর বস্ত্র
পোশাকে উন্নিত হয়ে যথারীতি ভুলে গেছ
একদিন তুলা থেকে জন্ম হয়েছিল...

তো উড়িবার বাসনা ছিল, ক্ষমতাও ছিল,
দিনে দিনে তবু তুমি
দেহে ফিরে এলে!
দেহে বুঝি রাজনীতি পেলে?

তুলাবস্ত্র, এই বিকাশন এই উন্নয়ন নিয়ে কি
কবিতা সম্ভব?

খ.
বিস্মরণ ফুটে ওঠে বালিতে
বিস্মরণ ফোটে জলে!
কাঁকড়ারা কবিতার দিকে চলে

কাঁকড়ারা শিল্পী। বালিতেই ছবি এঁকে যায়
ছবি বলতে, বালি-গুঁড়িগুঁড়ি আল্পনা;
ভাবনার দোষে, তমসে তমসে
এই নিয়ে এত আলোচনা
আমাকে মানায় কী?
আজ ভুলে গেছি
সমুদ্রথীরের শাদাঘোড়াকে দেখে
তুমি কি ভেবেছিলে? আমি কি
ভেবেছিলাম?
তখন, কী পরিমাণ রাত ছিল ঠোঁটে?
কী পরিমাণ চাঁদ ছিল চোখে?

বালিতে বালিতে, জলে
বিস্মরণ ফুটে থাকে

বাউলিমারা

মামুন, নিপন, সাজ্জু, বাদল, আজাদ ভাইসহ পৃথিবীর সকল তৃণভোজীদের উদ্দেশ্য
রাখিলেন সাঁই কূপজল করে
আসরে আসরে

আমি বকশিকারিই হতে গিয়ে
অমৃত মেঘের জলে
মৎস্য হয়ে গেছি!
আমার কানকো-ফোলা কৌতূহল
বন্ধুরা লুটিয়ে দেখেছে। আমিও
মহিলা বাউল দেখে, ‘লুটোপুটি’ হয়ে গেছি

শাদা শাড়িপাড়-ঝিলে, সিদ্ধিলগ্নে, মৃগয়ার মহিলা বাউলকে
কাব্যমতে এত বক বক লাগছিলো!!
এতেই ক্লিয়ার হয়, কেন আমি শিকারিই হতে চেয়েছি?
কিন্তু হয়ে গেলাম পুঁটি-
মাই নেম ইজ পুঁটিমাছ

পুঁটিকে, বকই হয়ত খাবে।
ভেতরে ভেতরে
আমি বুদবুদ (বুদবুদ মাছের নিঃশ্বাস)

মাছের আকাশও
রাখিলেন সাঁই খুব জল করে?

কথোপকথন

কবিতা এত ছন্দবহুল লেখেন... এর কী তাৎপর্য?
ছন্দে জাদু থাকে, জাদুই একপ্রকার গূঢ় ঐশ্বর্য।

ছন্দ আপনি শিখেছেন কার কাছে, মানে কে আপনার গুরু?
ধানের ক্ষেতের ঢেউ, অশ্বক্ষুরধ্বনি বা মনে নেই, কখন কিভাবে শুরু...

স্বরবৃত্ত কাকে বলে? অক্ষরবৃত্তের স্বরূপ কি? মাত্রাবৃত্ত ভালো লাগে?
দেখুন, ঐ বৃত্ত আমি ভাঙতে গিয়েই, পরে ঘুমিয়ে জেগেছি আগে।

আগামীতে কোন ছন্দে লিখতে চান? যা চান আপনি, ছন্দমন্ত্রী তাই-ই দেবেন-
চাই তো বটেই। স্বাচ্ছন্দ্যে লিখতে চাই। স্বাচ্ছন্দ্যে লিখতে চাওয়াই
মন্ত্রী আমার মুণ্ডু নেবেন?

চিরদিনেষু, চিরকালেষু

বুঝেছি- এই চিরদিনের ভাব তথা চিরকালের পথ- পথ চলে যায়
পথের ভ্রমণচিত্র এবড়ো-থেবড়ো দর্শন শেখায়! আর

হাঁটতে হাঁটতে, আমরা কত জ্ঞান সঞ্চয় করি
তবু রহস্য ফুরোয় না। পথ কি প্রব্রজ্যার, প্রজননশীল নয়?
এদিকে সন্ধ্যার দিকে যে পথ মিলিয়ে গেছে, সূর্যাস্তময়

এক অভিব্যক্তি নিয়ে, তার সংকেত আমি ভুলিনি এখনও।
ব্যর্থতা, তুমি তো জানই আমার সাফল্যের শৈলী, প্রকরণও

অভাগা রাত্রির পাশে ঝরে মরে পড়েছিল তারামাছ
আমার নোনতা চোখে, ঢুকে পড়ে ডুবোজাহাজ
কিন্তু আমার কোনও প্রস্তুতি ছিল না; দূরে
আমারই পাঠানো চিঠি, তারা মেঘ, তারা উড়ে উড়ে
যায়... আমি দক্ষিণে পাঠাই কিন্তু তারা উত্তরেই ঘুরে ঘুরে যায়

দেখেছি- এই-ই হয়ে থাকে যেন এমনই হয়ে থাকা চিরদিন;
যত শিল্প-বাণিজ্য-কাব্য, নিত্যানন্দ ভাবনাজলে
ডুবোজাহাজ, সাবমেরিন-

যেন যুদ্ধ বাঁধছে! একএকটি শরীরের পরম প্রতিপক্ষ
অন্য এক রণফল্গু শরীর।
ফলে, প্রণয়ে সঙ্গমকালেও, চূড়ান্তনে
জয়ের বাসনা মনে
আমরাই চিরকাল ভালোবাসা করি

নলেজ

জানাই হলো জ্ঞান এবং জ্ঞানী হতে কে না চায়?

পটভূমিকার মধ্যে নাচ, গান... ধাক ধাক চোলি-
এর মধ্যেই আমরা
মার্কস ও মাধুরীর কথা
আয়েশ করে
টি-টেবিলে বলি;

মাধুরী আপু, আরও নাচো ॥
মার্কসবাপু, নিজেই বাঁচো ॥

এই লগ্নে, এই নেত্রীমুখর পরিবেশে
খুব জানতে ইচ্ছে করে-
শাবনূর, পপি, পূর্ণিমাদের দেশের কবি, সাহিত্যিক, ছিচকে বুদ্ধিজীবী
তোমরা কেমন আছো?

নি-শাশ্বত স্বরব্যঞ্জন

সরকারি সঙ্গীত
আজ উৎসবের দিন! আজ এক ঢলে উঠবার দিন।
আজ আমরা ছায়াকে ছাড়িয়ে দুহাত বাড়িয়ে
গাইব-
ভুলব না শহীদের ঋণ
আজ সম্ভাবনার দিন... তা ধিন তা ধিন তা ধিন

আজ আমরা আকাশের নীল নীল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই
দুষ্কৃতিকারী বাতাসের চলাফেরা নিয়েও সতর্ক থাকতে চাই

এই যে নদী, নদীর পরে মাঠ, মাঠে মাঠে মরা-কৃষকের
খরা-হাসি নিয়ে কৃষি ব্যাংকের ক্যালেন্ডার ছাপাতে চাই

আজ যে এত বৃষ্টি হচ্ছে, এটা আমাদেরই অবদান
প্রতিশ্রুতি ছিল, গ্রামে গ্রামে তাই পৌঁছেও গেছে
আমাদের লেখা গান-
আমরা তো খুব অসাম্প্রদায়িক, কিন্তু আমরা
হিন্দু-মুসলমান
আমাদের কত গান!

বিরোধীদলীয় গান
আমরা মানছি না, মানছি না আজ আকাশ-মাটির রেখার ওটা
দিগন্ত বলে কিছু
আমরা জানতে চাই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দুঃস্বপ্নের বাজেট কিভাবে হাওয়া?

হাওয়াকেও আর পাওয়া যাচ্ছে না, ধরা যাচ্ছে না, এই
প্রকাশ্য ব্যর্থতার পর, আমরা রহস্যমন্ত্রীর পদত্যাগ
দাবি করছি
ইতিমধ্যেই আমরা নেকড়ে-শেয়াল ও ছাগলের সঙ্গে
জোট বেঁধেছি
যদি ফেয়ার এন্ড নন্দনতাত্ত্বিক নির্বাচন হয়
আমরা এবার ভোট চাইব বনে বনে ঝিঁঝিঁপোকা ও
জোনাকিদের কাছে
আমাদের তুমুল তৃণসমর্থন আছে...

কবির পরিণতি

একবার, বিনয় বলল- সমস্ত মাঠকেই আমি আমার করেছি। তাই, আমি হাঁটছি তো আমি আমার মধ্যেই হাঁটছি আর আমি মাঠ হয়ে যাচ্ছি। আমার মধ্যে দুলে উঠছে রাশি রাশি ধানক্ষেত, ফুলে উঠছে ভারাভারা সম্ভাবনা আর ছুটে যাচ্ছে রেললাইন, ঝাঁকঝাঁক বাবুই আর আমার ওপরে মেঘ, খ্যামটা দিয়ে দিয়ে পালাচ্ছে

অন্যবার বিনয় বলল- সমস্ত কবিতাই আমি আমার করেছি। সুতরাং, আমি পড়ছি তো সব আমার কবিতাই পড়ছি। যদিও, একটি কবিতা নির্জন দাশের, একটি কবিতা ঝরাপাতাদের, একটি কবিতা কেবল মাঠের, মাঠও আমার। আহা, একটি কবিতা আরেকটি কবিতায় যেতে গিয়ে, বুকের মধ্যে শাঁখ বাজাচ্ছে শিমুলপুরের ঝিঁঝিঁ; অবশ্য কেউ কেউ এসে বলছে- ধুধু চক্রবর্তী কাল কোলকাতায় এসেছিলেন, আজ প্যারিস যাবেন, পরশু থাকবেন নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায়, শ্যামলীতে!

সবিনয়ে বিনয় বলল- আর কত ঘুরবে তুমি চাকা? এবার কিছু ক্লান্ত হও, ক্লান্তজ্ঞানে দেখে যাও আমি ক্লান্ত মজুমদার, ঠাকুরনগর থাকি, আমাকে রোজ কাকতাড়ুয়া গল্প শুনিয়ে যায়; কাল ঝিঙেফুল ডেকে শুধোল, দাদা, শরীর ভালো? আমাকে নিয়ে ছোটকাগজ সংখ্যা বের করে, আমি গণিতেও ছিলাম শূন্য...

জ্যোতিষী বিনয় বলল- আমার মাঠের মধ্যে, আমি আর খুব বেশিদিন থাকতে পারব না। ধানক্ষেত ছেড়ে, রেললাইন রেখে, মেঘফুল কুড়োতে কুড়োতে আমি আর ফিরব না আমার ক্লান্তির কাছে। ভাঙাসেতু খালপাড়ে, অমলের টি-স্টলে, সন্ধ্যেপাড়ার রহস্যগন্ধে, আজ তোমাদের বলছি, শোনো- যদি সেই শুকিয়ে যাওয়া নদীটিকে মনে রাখো, তো আমাকেও মনে রেখো...

বাল্যমুখর আমার বন্ধু বিনয়- শেষপর্যন্ত কি বলতে চাইল- দেশকাল পেরিয়ে এসে দেখে যাও এই বুড়ো বয়সেও পিচ্চিদের মতো মেঘফুল কুড়োতে গিয়ে, আমি একদম বৃষ্টি বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছি