Thursday, August 27, 2009

ঝাঁ ঝাঁ ঝিঁ ঝিঁ

টোকন ঠাকুর

প্রকাশক
মজিবর রহমান খোকা
বিদ্যাপ্রকাশ
৩৮/৪ বাংলাবাজার, ঢাকা।
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০৩
স্বত্ত্ব: বর্ষা বিভাবরী
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
আলোকচিত্র: নাসির আলী মামুন
বর্ণবিন্যাস:
ইনামুল হক
দাম: পঞ্চাশ (৫০) টাকা।

উৎসর্গ
হযরত আহমদ ছফা
ছফার কথাগুলো ঝুরি হয়ে নেমে গেছে মাটিতে মাটিতে
ছফা দাঁড়িয়ে আছেন মাঠের শিয়রে
প্রাচীন বটের মতো

আত্মপক্ষ সম্প্রচার

আগুনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিলেই
        আমি মরে যাব। আমি
অনেক প্রক্রিয়া শেষে, আগুনকে হাতের আঙুলে
            ধরে ফেলি
তারপর ঠোঁটে লাগিয়ে দিই
তারপর আমার আত্মা পুড়ে ছাই হয়ে যায়
তারপর আমি আত্মভস্ম-ছাইয়ের মধ্যেই
            বৃষ্টির প্রার্থনা করি
তারপর বৃষ্টি ঝরে পড়ে

তারপর অঝোর একটি কবিতা-লাভ হয়
ফলে, কবিতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক জমে ওঠে
            এবং আমার জন্ম হয়

আশ্বিনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিলেও
                আমি বাঁচব না
আশ্বিন, যে অনেক অভাবে থেকেও, ছেঁড়ামেঘ
আর কাঁশবনের প্রশ্রয়ে আমাকে জন্ম দিয়েছে...
যে কারণে প্রতিবছর নদীপাড়েই আমার জন্মদিন
                পালিত হয়
যে কারণে বিসর্জনের সন্ধ্যায় আমি নদীকেই
মা বলে ডাকতে ডাকতে কেঁদে ফেলি

এছাড়া যত বাষ্পের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেলেও
            আমি বাঁচব না
                আমি মরে যাব
যেহেতু আমার কথারা এখনও
        বুদবুদ হয়ে জন্ম নিচ্ছে
            বুদবুদ হয়ে ফেটে যাচ্ছে

জাদুঘর-দর্শন

জাদুঘর সম্পর্কে আজ ধারণাই পাল্টে দেব
আজ আমি জাদুঘর সম্পর্কে নতুন তথ্য জানাব

প্রস্তুতিস্বরূপ
আমি অসংখ্যবার জাদুঘরে গিয়েছি
        আর অসংখ্যবার জাদুঘর দেখেছি।
বলা দরকার, প্রথমবার জাদুঘর-দর্শনের পর
আমার জাদুঘর-ধারণা ভেঙে গিয়েছিল;
সেই ভাঙা, পরে আরও টুকরো টুকরো হয়ে
            চূর্ণ হয়ে যায়।

কণা কণা জাদুঘর শুক্রবারে ভিড় বেশি জাদুঘরে
আমার চোখের মধ্যে জাদুঘর ঢুকে পড়ে

ফলে হরিণের হাড়, ফড়িঙের মমি, বাঘের ডামি
প্রত্নতত্ত্ব, ঢাল-তলোয়ার কী বাহার আমাদের হারানো জীবন
খাটপালঙ্ক, মূর্তি, মুদ্রা, ইতিহাস, জয়পরাজয় হাহাকার; এ বাদে
ফুলের বদলে ফুল, ফলের বদলে ফল, খুলির বদলে খুলি
আর মৃত বেলেহাঁসগুলি... এই তো?

এরকম আরও কত কী টুকরো টুকরো কণা কণা জাদুঘর
আমারই চোখের মধ্যে ঢুকে গিয়ে চোখ দুটো জাদুঘর হয়ে গেছে-

বিশ্বাস না-হলে, হে দর্শনার্থী
        তাকাও এবং দ্যাখো

দাতাসংস্থার লাবণ্যে আমাদের কবিজীবন

শব্দ নিয়ে কাজ করছি। এ কাজ করতে গিয়ে
সেভাবে ধরতে পারিনি যে, ইতিমধ্যেই আমরা কত
        নৈঃশব্দের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছি

একসময় থেমে যায় সকলপ্রকার গুঞ্জরণ
তাই বলে কি সবখানেই থামে?
সিঁড়িতে ওঠবার পথে, দেখা যাচ্ছে
        কেউ কেউ নামে

অথচ নামতে না-পারা, উঠতে না-পারা
কিন্তু ওঠার কল্পভারা
        এই যে মধ্যবিত্ত, এই যে ফুচকিমারা
                কসমোপলিটন:
এর মধ্যেই সঙ্গম হচ্ছে, শিশু জন্মাচ্ছে, ধন্য হচ্ছে
দাতাসংস্থার লাবণ্যে আমাদের কবিজীবন

বাক্যবিস্তার

বাক্য বহো বাক্য বহো বাক্য বহো ধীরে
বাক্য ব্যাকুল জলাঙ্গিনী, আছড়ে পড়ে তীরে।
ফলে, একদিন শুনতেই হল-
        ‘বাক্য বলতে কি বোঝ?’
আমি সাফ জানিয়েছি, বাক্য বলতে খুঁজে পাওয়া
            এবং নিখোঁজও

বাক্য চাহ বাক্য চাহ বাক্য চাহ পানে
বাক্য মাতাল মধুবন্তী, বনজোছনার গানে;
এতে একদিন বুঝতে পারলাম-
কোনও কোনও বাক্য বুদবুদ হয়ে জন্মায়
        ফেটে যায় এবং মরে যায়
এবং বুদবুদে নিহিত নিগূঢ় বাক্যরাগ
            বাতাসে মিলিয়ে যায়

বাক্য রহো বাক্য রহো বাক্য রহো ব্রতী
বাক্য লীলার বজ্রাঙ্গনা, বাক্য সরলমতি,
তবু একদিন দেখতেই হল-
বাক্য ক্রমশ জটিল হচ্ছে, জড়িয়ে যাচ্ছে আর
হাসি হাসি মুখগুলি নিভে আসছে...
        পান করছে এমএ পাশ আঁধার

বালিসংস্কৃতির দিনে

বালিসংস্কৃতির দিনে আমি তরমুজ-ভাবনা করি, আহ্ ত-র-মু-জ!
যা শুধু ফলই নয়, ফলকে ছাড়িয়ে
অন্য কিছু, অন্য ফাইল; ডাউনলোড মোমোরি
আর শাই শাই অন্তর্জাল, ইমেল-ফিমেল-হাওয়া, যখন
                দুহাত বাড়িয়ে
থেকে আকাশের দিকে অসম্ভব রচয়িতা
বলে সম্ভাষণ ছড়িয়ে পড়ে আমার, যে-আমি আমাদের...
যে-আমি যামিনীর তৃতীয় প্রহরে খসড়া করেছি
                সন্ধ্যার কবিতা,
যে-আমি সর্বশেষ সভাপতি, নির্জন বাঁধের

ওদিকে হেঁটে হেঁটে তারপর একদিন বিকেল, দুপুর, সকাল হয়ে
উল্টোপথে রাত্রিতে পৌঁছেই, আবার সন্ধ্যার দিকে
ছই তুলে পবণ উড়িয়ে দেখি: মুগ্ধপাঠ বিস্ময়ের
মধ্যে জন্ম নেয় তরমুজ, রমণীয়;
        বালুচরও তুলে ধরে হেন সত্যটিকে

কিরে কেটে বলছি, এসবের মধ্যে যে নদী,
            সেই নদীধারণাও লিখিত
                বৈদগ্ধ পয়ারে-
বালিসংস্কৃতির দিনে এত জল, রসবোধ আমাকে পুড়িয়ে মারে!

বর্ষাপ্লুত

বর্ষার পরেও কিন্তু বর্ষার জল জমে থাকবে
            এখানে সেখানে।
আর কিছুদিন পর, সেই জলও মিলিয়ে যাবে।
মিলিয়ে যাবে ছাঁটলাগা শিহরণ, জানলার এপাশ
মিলিয়ে যাবে আমার দেখা একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা

কিন্তু বর্ষার লেখা, আপাদমস্তক ভেজা কবিতাটি
                থেকে যাবে।
হেমন্তে, যখন বৃষ্টিপ্রায় অসম্ভব
তখন এটি পাঠ করলেই দেখবে-
মিলিয়ে যাওয়া অনেক অঝোর বিকেল
            অমর ইচ্ছা
সব আবার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে...

ভাবতে পারো, এই বর্ষায় কত কিছু হয়ে যাচ্ছে?

খাদ্যসামগ্রী

আমাদের খাদ্যতালিকায় আমি তোমার নাম লিখে দিতে চাই- কিন্তু কেন যেন দেয়াই হয় না। হয়ত একারণে যে, পাছে তোমাকে আমি খেয়ে ফেলি। কিন্তু আমি না-খেলেও, অবশ্যই অন্য কেউ তোমাকে খাবে, আমি তার খাবার-আস্বাদ্য ঢেকুর শুনতে পাব।

আমাদের খাদ্যতালিকায় আছে উল্লেখযোগ্য বিশিষ্টতা। চাল-ডাল, নুন, ঝলসানো আগুন, সবুজ সবুজ শীতকালীন কুয়াশা, পরম প্রেমে পাওয়া ভালোবাসা আর আমাদের স্বপ্ন, সময়, সম্ভাবনা... কত যে কত কী?

আমরা কখনও অনাহারী থাকব না, বাংলাদেশে। অবশ্য কেউ কেউ বা অনেকে সবাই, বেঁচে থাকতে গিয়ে চিরকালই পোড় খেয়ে চলেছে

জানো, পোড় খেতে কী মজা?

প্রাপ্তিসংবাদ

শিল্পী নঈম হারুন শ্রদ্ধাভাজনেষু
বিড়াল যদি উড়ে যায়, আমরা কি খেয়ে বাঁচপো?
খিদেও যদি কেটে পড়ে, আমরা আগুন, নাচপো।

সাধারণত বিড়াল খাওয়া নিষেধ, কিন্তু খাচ্ছি।
বিড়ালের তো উড়ালের কথা না, কিন্তু সে উড়তেছে
                দেখতে পাচ্ছি।
এতদসঙ্গে দেখা যাচ্ছে- স্বাধীনতা নিতে নিতে স্বেচ্ছাচারী
এক সভাপতি (মধ্যাহ্ন সংরক্ষণ কমিটির) সেই কি এই
        পার্কের দুপুরে বসে
বিড়াল ওড়াচ্ছে, পাতা পোড়াচ্ছে? ভাবনার দোষে
সিনেমায় দেখা ঘোড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেও দৌড়াচ্ছে?

এদিকে, বাঙলা কবিতা কিছু পাক বা না-পাক
            কবিরা কিন্তু দশক পাচ্ছে!

স্মৃতিবৎ

মনে থাকে, মনে থেকে যায়
সুষমাদের বাড়ির পেছনে বকুলগাছ ছিল
কিন্তু সুষমা গোলাপ পছন্দ করত

আমি পছন্দ করি বকুলতলা

বহুদিন পর, সুষমার মুখ আজ আবছা-ঝাপসা মনে হয়।
কেবল কয়েকটি গুটিবসন্তের দাগ ছাড়া
        আর কিছুই কি মনে পড়বে না?

দুপুরে, বনের মধ্যে

শুধু আবছায় প্রকাশিত
শুধু ধারণা গভীরতর!
দুপুরে, বনের মধ্যে আজও
পাতা, এই যে এভাবে ঝরো
এর কোনও মানে আছে?

শুধু উড়ে যাওয়া প্রতিদিন
শুধু কলসিতে ভরা ছল,
আমিও জানিয়ে রাখি, প্রেমে
রেখেছিলাম ভূমিকা প্রবল
তাতেই তুমুল কাঁপানো প্রত্যাখ্যান?

শুধু প্রত্যাখ্যান থাকে বলে
এদেশে এখনও প্রেমিক মেলে;
শুধু আবছায় দেখে, লিখে
অহেতু, অঝোর কবিতা পেলে-
তার কোনও মানে আছে?

আর কোনও মানে আছে-
পাতার এই যে এভাবে ঝরা?
দুপুরে, বনের মধ্যে আজও
মৃগয়ার অর্থ ক্লিয়ার করার
আর কোনও মানে আছে?

হাটের কবিতা

গঞ্জে, হাটের নিকটে এসে শুনে ফেলি-
বেচাকেনার নামে এক থই থই কলরব!

বয়েসি সন্ধ্যা নামছে, আর আমি আশ্চর্য হই
একএকটি মানুষের সঙ্গে হাট চলে যাচ্ছে
        দহকোলা, দুধসর, ঝিনুকদহের দিকে;
এশার আগেই হাট বলতে কিছু নেই, সব
পকেট উজাড় করে থলের ভেতরে চলে গেছে
        মৎস্য হয়ে, মাংশ হয়ে- এমনকি
            নিদ্রাকুসুম তৈল এবং রাজা কনডম হয়ে...

আগামী শুক্রবার এলে, আবার কি হাট দেখা যাবে?

গঞ্জের হাট সম্পর্কে আরও যা যা দেখেছি, লিখতে গেলে
    বিগসাইজের একটা উপন্যাস হতে পারে;
আপাপত, লাউ বিক্রি না-হওয়া বুড়ো স্বদেশবন্ধুর সঙ্গে
হাটের কবিতা কিভাবে লেখা যায়, তা-নিয়ে
            আলাপ জমাই, চলো!

হাওয়াই আলাপ

‘হাওয়াই হচ্ছে রিয়েলিটি, বুঝলেন?
এই যে বাসের মধ্যে, এত হাওয়া ঢুকে পড়ছে,
স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও বারবার হাওয়ার কথা বলেছেন-
        পাগলা হাওয়া, মন্দ মধুর...’

পাশের লোক বললেন; আলগোছে বললেন,
বললেন- ‘আচ্ছা, হাওয়া হতে গেলে কি কি লাগবে?
    হাওয়াদের মধ্যে বিখ্যাত কারও নাম...?’

‘আরে প্রশ্ন রাখেন। শোনেন, এটা এখন ওপেনসিক্রেট যে-

রাজনীতি শেয়ারবাজার বিশষ্ক তরুণীরা ব্রা থেকে শুরু করে
রাষ্ট্রীয় গোপন সিদ্ধান্তের মধ্যেও হাওয়া ঢুকে পড়ছে,
যে কোনও মুহূর্তেই বোশেখ নামিয়ে দেবে-
একবার ভাবুন তো, কী হবে?’

‘আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আপনি কট্টর হাওয়াপন্থী?
তা হাওয়াদের সঙ্গে আপনার আঁতাত কবে থেকে?’

‘না-না, কি যে বলেন?’

‘তবে হ্যাঁ, মশারির ভেতর হাওয়া ঢুকে পড়েছিল-
এই কবিতাটি আমি পড়েছি, যদিও মীমাংসা পাইনি,
আপনি জানেন, এর মর্মার্থ কি?

‘শোনেন, প্রশ্ন বাড়ালে প্রশ্নই বাড়ে, তার চেয়ে বোঝেন-
হাওয়াদের সর্বশেষ অবস্থা... এখন ওরা
বঙ্গভবন, গণভবন, অধিবেশন চলাকালীন সংসদভবন
এমনকি চিফ অফ স্টাফ কিংবা রাষ্ট্রপতির অনুমতি ছাড়াই নবম ডিভিশনের
ট্যাঙ্কের মধ্যে ঢুকে পড়ছে; জানেন
হাওয়া হতে গিয়ে অনেকেই আর ফিরে আসেনি!
হাওয়াদের ইতিহাসও বড় বেহিসেবি, মর্মান্তিক!
সত্যি করে বললে, দিনতারিখের উল্লেখও নেই
        কখন কিভাবে কোত্থেকে তাদের
            যাত্রা শুরু হয়েছিল?

সিটি সার্ভিসের বিআরটিসি থামল। একজন নেমে গেলেন
                হাওয়ার মধ্যে।
অন্যরাও নেমে যাবেন, হাওয়ার মধ্যে।

আবার কি দেখা হবে, হাওয়ার মধ্যে?
আবার কি কথা হবে, হাওয়ার মধ্যে?

Tuesday, August 25, 2009

পুলিশ সমীপে

পুলিশ, তুমি ছাত্রীহলের দিকে বন্দুক-তাকিয়ো না
            ওরা ভয় পাবে।
যা বলার ছাত্রদেরই বলো। প্রয়োজনে চালাও গুলি
যদি চাও নিয়ে যাও সবচেয়ে মেধাবির খুলি!
কিন্তু, ছাত্রীহলের দিকে অ্যাম্বুশ কোরো না! প্লিজ
        ওরা ভয় পাবে-

ভয় পেলে, যে কোনও ছাত্রকেই পরে পুলিশ মনে করবে;
            ফলে, কি দাঁড়াবে?

ভোট দিতে পারার ক্ষমতায় বসে লেখা

শহরে সে এক দৃশ্য আছে, গ্রামবাসিরা
            কিছুই জানো না?
ছাদের ওপর পাহারা-পুলিশ
    বায়ু পাহারা করে?
প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে কভু আকাশ থেকে
দুষ্কৃতিকারী নক্ষত্র যেন ঝাঁপিয়ে না পড়ে?

এটাই আমার মনে হয়েছে, মেট্রো-হাওয়ায়
        মনে হওয়াটা ব্যক্তিগত।
উপমন্ত্রী কূপমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ক্ষতিমন্ত্রী
            মন্ত্রী কজন?
                মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কতো?
গ্রামবাসিরা তাও জানো না?

এনজিওদের সুশীল মানো? কবিতা জানো?
কতো তোমাদের জানাজানির
        শতকরা হার?
            রকম বাহার!

না-এখনো ভাবছ শুধু
        শীতমন্ত্রী
            গ্রীষ্মমন্ত্রী
                বর্ষামন্ত্রীর সমন্বয়ে
                    গঠিত হবে বিকল্প সরকার?

Sunday, August 23, 2009

সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ

শুভসকাল
অনেকে অনেক কিছু হতে চায়
ভেবেছি, আমি হবো কাশারশালার কয়লা

আমি হাপরের হাওয়া পেয়ে, খেয়ে
ভালোটালো বাসবো বিভস্মজীবিকা...

প্লিজ, এর বেশি কিছু বলতে পারব না
    বাঙলা কবিতার পাঠকপাঠিকা!

শুভদুপুর
অনেকে অনেক কিছু দিতে চায়
দেখেছি, আমি দিতে পারি বাক্য, বিশেষণা

আমি বলতে পারি, এই নদীর মধ্যে
কতটুকু পাহাড়ি ঢল, কতটুকু
        বৃষ্টির জলকণা?

শুভসন্ধা
অনেকে অনেক কিছু পেতে চায়
দেখি কী, পশ্চিম আকাশে লাল লাল
দীর্ঘশ্বাসের ফালি
আমার জন্য গিফট পাঠাচ্ছে
        বিমুগ্ধ ভোজালি?

শুভরাত্রি
অনেকে অনেক কিছু নিতে চায়
কিন্তু আমি শিহরণ ও স্মরণযোগ্য
বরফমাখানো রাতে-
ঘুমিয়ে পড়ার আগে, চাই আমারই মতন
        খসে পড়া নক্ষত্র কুড়াতে।

ধনেশ পাখির ঠোঁট

মধ্যে মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে স্থল ও আকাশ।
আমার মাথা আরও মনোযোগী হচ্ছে, ফলে
    বুঝতে পারছি আদিগন্ত ঝিম কাকে বলে?

এরই মধ্যে পিপাসারা হাওয়া পেয়ে
        দীর্ঘ তরুর তলে
            দীর্ঘতম হলে
দেখেছি- ধনেশ পাখির ঠোঁটে
    যথামৃত পিপাসারা
        তথামৃত কবিতা হয়ে ওঠে;

ফের ভাবি, কবিতায়ও কি হান্ড্রেডপার্সেন্ট
            অভিপ্রায়টা ফোটে?
আমি কি নিক্ষিপ্ত নই- ধনেশ পাখির ঠোঁটে?

রহস্যজন্ম

ডাঙায় বাচ্চা রেখে
কুমির নেমে যায় জলে।
কোনও কোনও কথা
প্রকাশিত রহস্যচ্ছলে।

আমি সে কথার অর্থ
ভাবি নীল, হয়ে যায় লাল।
চকের গুঁড়োতে লেখা
ব্লাকবোর্ডে শীতের সকাল।

পদ্য, তুমিও মারো?
মার খেয়ে মরে যাই,
আমি আবার জন্মাই;
জিতে দেখি বিজিত এবারও...

এবারও... দেখতে দেখতে
কবি হয়ে উঠি-
এবারও আমার মধ্যে
খসড়া, কাটাকুটি;

এবারও চোখের জলে
ফেলেছি গভীর জাল!
কিন্তু দেখি মুছে গেছে
ব্লাকবোর্ডে লিখিত সকাল।

শরীরে আগুন রেখে
একদিন কাঁপাকাঁপা শীতে,
আমার চিৎকার ছিল
নিদ্রার অতলে... নিভৃতে

নিদ্রা, তুমিও মারো?
মার খেয়ে মরে যাই
যথারীতি দেখা যায়
আমি, জন্মেছি আবারও।

দারুণ দিনের সূর্য
হারিয়ে যাচ্ছে অস্তাচলে
লিখব না যে পদ্য, তাই
প্রকাশিত রহস্যচ্ছলে?

দেখব না যে দাহ, তাও
দেখানোর ভার নিই, যথা
শরীরে আগুন মেখে
কেঁপে কেঁপে যায় রহস্যকথা!

রহস্য তুমিও মারো।
মার খেয়ে মরে যাই
এইবারও দেখা যায়
আমি, জন্মেছি আবারও।

প্রাচীধরিত্রীর কবিতা

প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস; সব বাতি এখনো নেভেনি
প্রাচীধরিত্রীর ছাওয়াল, ঠিকঠাক কিছুই হলো না।
হয়তো দরজা হল, কিন্তু তার জানলা হল না
আহা কত মেঘ কত আকাশ কত বালারা উড়ে গেলো।

বালেশ্বর বাল আমি হরিদাস পাল, না-তার ছাওয়াল?
আনন্দ ভিক্ষার নামে, হাতভরা হাহাকার ফুটিয়ে ফাটিয়ে
            তাকেও কবিতা বলেছি?
আমার হাতের তৃষ্ণা, জানো, শূন্যতাকে ধরতে ধরতে
    কতবার ধরেছে আগুন?
        আঙুলেরা পুড়ে পুড়ে গেছে!
আমি তাকেও কবিতা বলে, বয়ঃমন্ত্র ধরতে চেয়েছি-
    ধরতে না পারি, ছুঁতেই চেয়েছি।

যথারীতি ফুলের যোগ্যতা নিয়েও কাশফুল বড় বিস্মরণশীল
                    বসন্ত উৎসবে-
সেই কাশও হতে পারিনি, গাঙপাড়ে শুধু শুধুই বসে থেকেছি
নদীর রচনা লেখাদিনে, আমিও কিছুদিন কিশোর থেকে দেখেছি।

ভ্যাবসা কবিতাবাসনা নিয়ে, আমি আসর থেকে উঠে গিয়েছি।
হয়তো কবিতা হয়নি, কেবল মুখের ভাঁজরেখারা আরও
            সামনের দিকে চলে এসেছে।
নিদেনপক্ষে আমি পাখিও হতে পারিনি, পাতাও না
অথচ সেদিন হরিয়াল-লুপ্তির স্মারক লিখতে গিয়ে
            ‘ঘুঘুরা কোথা” ভাবতে ভাবতে
            অবশিষ্ট গ্রামান্তের দুপুরে নির্জন থেকেছি
বলা যায়, অস্তিত্বগান কুড়িয়ে ফিরেছি

এবং এ নিয়ে অনেকে লেখে, কিন্তু আমি লিখতেও পারিনি

এদিকে আমার লেখারা, অলিখিত থেকে থেকে একদিন
একদল বকের সঙ্গে, ঝিলের সন্ধানে গিয়ে
        ফিরে আসতে না দেখে
উৎকণ্ঠা প্রতিযোগিতায় আমি শ্রেষ্ঠ হয়েছি।
তবু মেঘেদের কেউ হয়ে উঠতে পারিনি। দু’একবার ভেবেছি
            মেঘ মারুতি না মার্সিডিজ?

প্রাচীধরিত্রীর দিকে শুষ্ক নদীভাবনায়
    বিদেশি টাকায় উন্নয়নের ব্রিজ
দেখতে দেখতে বা সিরিয়াসপ্রেম ভাঁজতে ভাঁজতে
আমার জন্যে যারা দাঁড়িয়েছিল, তাদের সঙ্গেই
        যোগাযোগ হয়নি। ফলে
প্রতিদিনই সভা করি হয়তো কেউ দেখছে না এমন
            বৃক্ষের তলে

হয়তো কয়েকটি কবিতা ঠিকই
    নদীদের সঙ্গে নদী হয়ে বয়ে চলে...
                এই যা।

বৃষ্টির দিনে প্রেমিক / গেরিলা

কবিতা        বৃষ্টিপ্রিয় দিনে
কি চাও        প্রেমিক / গেরিলা?
আমি তো      পাহাড় সমান উঁচূ
আমার         বুকের মধ্যে টিলা...

হঠাৎ-ই          হঠাৎ জানাশোনা
আগে কী         দেখাও হয়েছিল?
ঘূর্ণি              ঘুরতে ঘুরতে ঢেউ
বাতাসের        সুনাম বয়েছিল!

তা শুধু         আমার মধ্যে চোরা
তা শুধু         বহনযোগ্য টান
তা নিয়ে        কবিতা গাঁথতে গিয়ে
ভাবিনি         কবিতার বোন গান

ভাবিনি        আবার দেখা হবে
এতসব        ছাঁটলাগা শিরশির
মেঘময়        ঘটনাপঞ্জি বলে
‘অনড়        তুই কেন অস্থির?’

সত্যি           ঘুমের মধ্যে শিশু
শিশুটির        হাতপা বড়, তবু
তাকে আজ     মাতৃক্রোড়ে তোল

অথবা         অন্য প্রতিচ্ছবি
দেখেছ         ধূপলাবণ্য ধাঁধা
সূচনায়        শিলাখণ্ড ভেবে
ভাবনা         আপন সুরে বাঁধা

সে বাঁধা        উৎরে যেতে পারি
কোনওরূপ      সামান্য সংকেতে
যতজল         বর্ষণে বর্ষণে
চিরকাল        অর্থকরী, ক্ষেতে

ক্ষেত তো       ধানের, অভিজ্ঞঘানের
এদেশে          কবিতামাখা দিনে
কত কী         হারিয়ে যাওয়া, ভুলে
হারানো         পথ নিতে চাই চিনে

এবেলা          জানার উচ্ছে খুব
রহস্যে          ছন্দোবদ্ধ টিলা
কবিতা         বৃষ্টিমাখা দিনে
আমি সেই      প্রেমিক/গেরিলা?